সিংড়ায় সাঁকো ভেঙে নদী পারাপারে ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা
- সিংড়া (নাটোর) সংবাদদাতা
- ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১১:০৯, আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২১
নাটোরের সিংড়ার তাজপুর ইউনিয়নের রাখালগাছা বাজার ও হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন নাগর নদ পারাপারের একমাত্র বাঁশে সাঁকো ভেঙে ভোগান্তিতে পড়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। দুর্ভোগেও রয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই নৌকায় পারাপার হচ্ছেন।
এলাকার বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘ প্রায় দেড় যুগ ধরে হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন নাগর নদে ভোট এলেই শুধু মিলে ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস। কিন্তু পরবর্তীতে আর কেউ কথা রাখে না। তবে সেখানে ইট-পাথরের ব্রিজ নির্মাণ করা সম্ভব না হলেও প্রতি বর্ষার শুরুতে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের চেষ্টা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত সংসদ নির্বাচনের সময় সেখানে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণের জন্য এক লাখ ৬৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় উপজেলা পরিষদ।
কিন্তু এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আস্থাভাজন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে সেই অর্থ পকেটে তুলে নেয়ার। পরে ছোট-বড় সকলের চাঁদা ও স্বেচ্ছাশ্রমে সেখানে একটি সাঁকো নির্মিত হয়। কিন্তু হঠাৎ নদীতে কচুরিপানার জটে ওই সাঁকোটি ভেঙে পড়ায় নতুন করে ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
এলাকাবাসীরা আরো জানায়, সর্ব প্রথম ২০০৫ সালে নাগর নদের এখানে একটি জিপাবুল ব্রিজ নির্মাণের জন্য তৎকালীন এমপি মহোদয়ের সুপারিশসহ উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহাদত হোসেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন পাঠান এবং জোড় তদবিরও চালান। পরে ওই প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি এখনো পূরণ হয়নি। রাখালগাছা, হরিপুর, হিয়াতপুর, পারচক-সহ গ্রামের প্রায় সাত হাজার মানুষকে এই নদী পাড়াপাড় হয়ে সিংড়া সদরে হাট-বাজার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শহরে লেখাপড়ার জন্য যেতে হয়। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য ও তেল-সার আনা-নেয়ায় ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এ সকল কারণে ২০১০ সালে এলজিএসপি প্রকল্পের অর্থায়নে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে প্রতি বছরই এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রম ও নিজস্ব অর্থায়নে এখানে সাঁকো নির্মাণ হয়ে আসছে।
স্থানীয় কৃষক ওয়াসিম আলী ও অটো-ভ্যানচালক সাব্বির হোসেন বলেন, ‘বাড়ি বাড়ি থেকে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা চাঁদা তুলে সাঁকো নির্মাণ করেছিলেন। সাঁকো ভেঙে পড়ায় সবার জীবনের ঝুঁকি বেড়েছে। অথচ উপজেলা পরিষদের বরাদ্দের অর্থ তুলে নিয়ে পকেট ভরেছেন চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিন।’
হরিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লোকমান আলী বলেন, ‘অত্র প্রতিষ্ঠানের বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৭০ জন। এর মধ্যে শতাধিক শিক্ষার্থীকে নদী পাড় হয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয়। হঠাৎ সাঁকোটি ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কমে গেছে।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মিনহাজ উদ্দিনের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা প্রকৌশলী আহমেদ রফিক বলেন, ‘রাখালগাছা বাজার এলাকায় নাগর নদে একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাবনা একাধিকবার পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, এবার ব্রিজ নির্মাণ করা সম্ভব হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হা-মীম তাবাসসুম প্রভা বিষয়টি জানার পর যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন।