২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

বাগাতিপাড়ায় রশি টেনে নৌকায় নদী পারাপার

- ছবি : নয়া দিগন্ত

নাটোরের বাগাতিপাড়ার বুক চিরে বয়ে চলেছে বড়াল নদী। ওই নদীর গয়লার ঘোপ-পাঁকা ঘাটে একটি ব্রিজের অভাবে বর্ষা মৌসুমে রশি টেনে নৌকায় এবং শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকোয় পারাপার হতে হয় শিক্ষার্থীসহ সাধারন মানুষদের। এতে করে নদীর দুই পাশের কমপক্ষে ১০ গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ভয়াবহ বিপাকে রয়েছেন।

স্থানীরা জানিয়েছেন, জামনগর ইউনিয়নের অন্তর্গত গয়লার ঘোপ একটি গ্রাম। এই গ্রামটিকে তিন দিক থেকে ঘিরে রেখেছে বড়াল নদী। অনেকটা ইংরেজির ইউ বর্ণাকৃতিতে ঘেরা গ্রামটি দেখতে কিছুটা দ্বীপের মতো। শুধুমাত্র উত্তর দিকে রয়েছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। আরো দু’টি সংযোগ রাস্তা থাকলেও প্রধান অন্তরায় নদী। পথ দু’টি গোচর-গয়লার ঘোপ ঘাট এবং গয়লার ঘোপ-পাঁকা ঘাট। এই দুই পথে বর্ষা মৌসুমে নৌকায় এবং শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকোয় পারাপার হতে হয়। এছাড়া গয়লার ঘোপের উত্তর পাশে প্রায় ১০টি গ্রামে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসতি। নদী বিধৌত এ গ্রামগুলোর প্রধান ফসল সবজি। এখানকার উৎপাদিত সবজি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়। উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটর দূরে হওয়ায় এসব কৃষিপণ্য খুব কম দামে ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করতে হয়।

অন্যদিকে, গ্রামটির পূর্ব-দক্ষিণ কোণে রয়েছে পাঁকা ইউনিয়নের পাঁকা গ্রাম। গয়লার ঘোপের শিক্ষার্থীরা পাশের জামনগর এবং পাঁকা গ্রামের প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজে পড়ালেখা করে। গয়লার ঘোপ থেকে নদ পার হয়ে মাত্র আধা কিলোমিটার দূরে আড়ানী রেলস্টেশন। অদূরে রয়েছে বাঘার আড়ানীর একটি বিখ্যাত হাট। কিন্তু নিকটবর্তী পাঁকার এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের যাতায়াত, বড়াল পাড়ের পাঁকা হাট ও আড়ানীর হাটসহ এই অঞ্চলের মানুষের সাথে যোগাযোগের প্রধান বাধা বড়াল নদীটি। গয়লার ঘোপ গ্রাম থেকে উপজেলা সদরের সহজ পথ পাঁকা হয়ে আড়ানী-বাগাতিপাড়া সড়ক। কিন্তু জামনগর হয়ে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা সদরে যেতে হয় এ গ্রামটির মানুষদের। ফলে সাধারন মানুষদের প্রায়শই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অথচ একটি ব্রিজ বদলে দিতে পারে ওই সকল গ্রামের মানুষের ভাগ্যের চাকা। বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদ, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের আগে এলাকাবাসীর দাবির মুখে ব্রিজটি করার প্রতিশ্রুতি দেন। ক্ষমতায়নের পর কেউ তা বাস্তবায়ন করেন না।

পাঁকা ঘাট এলাকার শিক্ষক আব্দুস সালাম বলেন, ‘বর্ষাকালে ছাত্র-ছাত্রীদের নৌকায় অনেক কষ্টে পার হতে হয়। অন্য সময়ে বাঁশের সাঁকো তাদের ভরসা। তাছাড়াও ব্যবসার মালামাল বহনে গয়লার ঘোপের মানুষদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ব্রিজের অভাবে তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারছেন না।’

নৌকার মাঝি ইদ্রিস আলী বলেন, ‘তিনি প্রতি দিন দেড় থেকে দুই শ’ লোক পার করেন। এতে তার জীবিকা চলে। কিন্তু সাধারন মানুষের দুর্ভোগ লাঘব আর সবিজ উৎপাদনকারীদের ন্যায্যমূল্য পেতে ওই ঘাটে একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রয়োজন।’

এ ব্যাপারে জামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী বলেন, ‘প্রকৌশল অধিদফতর থেকে বেশ কয়েক বার মাপজোঁক নিলে পরে আর কোনো খবর নাই। কৃষকদের কৃষি পণ্য সঠিকভাবে বাজারজাত এবং সাধারণ মানুষসহ ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ গয়লার ঘোপ-পাঁকা ঘাটে ব্রিজটি স্থাপন করা প্রয়োজন।’

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আজিজুর রহমান জানান, ‘ওই ঘাটে একটি ব্রিজের প্রকল্প পাঠানো হয়েছিল। মাটি পরীক্ষার তথ্যও ঊর্ধ্বতন বরাবর পাঠানো হয়েছে। আশা করছেন দ্রুতই ওইখানে ২০০ মিটার দীর্ঘ একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement