১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

২০২২ সালে কেমন ছিলেন টেক বিলিয়নিয়াররা

-

ইলন মাস্ক

২০২২ সালটা ইলন মাস্কের কাছে ছিল সংবাদের শিরোনাম হওয়ার বছর, তবে সম্পদের দিকে তাকালে মাস্কের জন্য বছরটি মোটেও ভালো ছিল না। টুইটার বিতর্ক, টেসলার শেয়ার বিক্রিসহ নানা কারণে মাস্কের সম্পদে চরম পতন দেখা যায়। বছরজুড়ে লেগে থাকা টুইটার বিতর্ক বন্ধে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে ইতিহাসের ব্যয়বহুল চুক্তিটি সম্পন্ন করেন মাস্ক। অধিগ্রহণ চুক্তি থেকে পেছনে হটার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও আদালতের নির্দেশে ফেঁসে যান তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জনপ্রিয় সাইট টুইটার নিয়ে তার অতি আগ্রহের খেসারত দিতে হয়েছে নিজ প্রতিষ্ঠানের বিপুল শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে।
করোনা মহামারীর মধ্যেও মাস্কের সম্পদ বেড়েছিল রেকর্ড পরিমাণ, ২০২১ সালের নভেম্বরে যা ৩৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ঠেকেছিল। ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, সেরা ধনীর তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে চলে যাওয়া মাস্কের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ১৩৯ বিলিয়ন ডলার। অবাক করার বিষয় হলো টুইটারের যে আসনটি দখল করেছিলেন, এখন সেই আসনটি থেকে সম্প্রতি সরে যাওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন মাস্ক নিজেই।

মার্ক জাকারবার্গ


সম্পদের তালিকাতে শীর্ষে থাকা জাকারবার্গ জন্য ২০২২ সাল মোটেও অনুকূলে ছিল না। প্রাইভেসি, নিরাপত্তা ঝুঁঁকি, সন্ত্রাসবাদ ও নির্বাচনে প্রভাব রাখা নিয়ে নানান বিতর্কে কয়েক বছর খুব খারাপ যাচ্ছে ফেসবুক ও তার প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকাবার্গের জন্য।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত মেটার শেয়ার মূল্য ৫৭ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। অর্ধেকে নেমে এসেছে প্রতিষ্ঠাতা জাকারবার্গের সম্পদ, ছিটকে গেছেন শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকা থেকেও। এমন ধসের পেছনে মুখ্য ভূমিকায় ছিল শেয়ার মূল্য কমে যাওয়া, অ্যাপলের প্রাইভেসি পলিসিতে পরিবর্তন ও চীনা মাধ্যম টিকটকের উত্থান। সব মিলিয়ে ২০২২ সালটা মেটা ও জাকারবার্গের জন্য মোটা দাগে ক্ষতির একটি বছর।

বিল গেটস


মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের জন্যও ২০২২ সাল খুব একটা সহায়ক ছিল না। তবে, অন্যদের সাথে তার সম্পদ হারানোর মধ্যে কিছুটা তফাৎ আছে। অর্থনৈতিক মন্দার পাশাপাশি গেটসের সম্পদ হ্রাসের পেছনে ভূমিকা রয়েছে দাতব্যের মতো এক মহৎ কাজেরও। বরাবর জনকল্যাণমূলক দানের জন্য খ্যাতি লাভ করেছেন গেটস দম্পতি। গেটস দম্পতি তাদের নামে গড়া বিশ্বের প্রভাবশালী দাতব্য সংস্থা বিল ও মেলিন্ডা গেটসে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করার ঘোষণা দেন। শুধু তাই নয়, বিদায়ী বছরের জুলাইয়ে গেটস টুইটের মাধ্যমে তার সব সম্পদ দানের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আমি কার্যত আমার সব সম্পদ ফাউন্ডেশনে দেয়ার পরিকল্পনা করছি। আমি ধনাঢ্য ব্যক্তি-তালিকার নিচে চলে যাব এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকা থেকে বাদ পড়ব।’
ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, চতুর্থ অবস্থানে থাকা গেটসের বর্তমান সম্পদের পরিমাণ ১০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

জেফ বেজোস


করোনা মহামারীতে ধুন্ধুমার ব্যবসা করে সম্পদের পাহাড় গড়েছিলেন বেজোস। ২০২১ সালে তার ব্যক্তি-সম্পদের পরিমাণ ছাড়িয়ে গিয়েছিল ২০০ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক। ২০২২ সালে এসে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর মুকুট হারানোর পাশাপাশি বিপুল সম্পদ হারান ই-কমার্স জায়ান্ট আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস।
ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, শীর্ষ সম্পদশালীদের তালিকায় বেজোসের অবস্থান পঞ্চম। তার সম্পদের পরিমাণ ১০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত বেজোসের হারানোর সম্পদের পরিমাণ ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট, নির্বাহী পদ থেকে সরে যাওয়ার পাশাপাশি তার সম্পদ কমার পেছনে এক অন্যতম বড় কারণ হচ্ছে বিয়েবিচ্ছেদ। কারণ তার সাবেক স্ত্রী ম্যাকেঞ্জির সাথে বিয়েবিচ্ছেদের ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ৩৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারে।

চ্যাংপেং ঝাও


অনেকের কাছেই চ্যাংপেং ঝাও অপরিচিত, পরিচিত হওয়ার আগেই হারিয়ে যেতে বসেছেন ঝড়ের বেগে বিলিয়নিয়ার হওয়া চীনা-কানাডীয় এই উদ্যোক্তা। ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে সম্প্রতি বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে ক্রিপ্টোকারেন্সি। আর ক্রিপ্টোকারেন্সির এই নব্য-দুনিয়ায় ঝাও পরিচিত একজন অগ্রপথিক হিসেবে। মাত্র পাঁচ বছর আগে, ২০১৭ সালে চীনা বংশোদ্ভূত চ্যাংপেং ঝাও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও প্রভাবশালী ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি ‘বিনান্স’।
অন্যসব প্রযুক্তি বিলিয়নিয়ারদের মতো চীনা ক্রিপ্টো সম্রাট হিসেবে পরিচিত ঝাওয়ের জন্যও ২০২২ সালটি ছিল দুঃসময়। ২০২১ সালের জুলায়ে ৯৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার নিয়ে শীর্ষ বিলিয়নিয়ারদের পাশে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন ঝাও। তবে, ক্রিপ্টো প্রিসেল অনুযায়ী বিদায়ী বছরে ঝাও তার সম্পদ হারিয়েছেন প্রায় ৮৫ ভাগ। টাকার অর্থের তার হারানো সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তার সম্পদ হারানোর পেছনে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থনৈতিক মন্দা, বিটকয়েনের তুলনায় মার্কিন ডলারের ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি এবং ক্রিপ্টো-ধস অন্যতম।


আরো সংবাদ



premium cement