নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত কোনো জোটে না গিয়ে এককভাবে সর্বাধিক আসনে প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে গণ-অভ্যুত্থানের তরুণদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই আসনগুলোর দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হবে বলেও জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক ও অন্তর্র্বর্তী সরকারের সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
গতকাল বুধবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলের মরহুম জুলাইযোদ্ধা গাজী সালাউদ্দিনের বাড়িতে তার পরিবারের সাথে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান নাহিদ।
দলটির প্রধান বলেন, সারা দেশের ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে তার দল। তবে, ফ্যাসিবাদবিরোধী এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে ‘অগ্রণী’ ভূমিকা রাখা ব্যক্তিদের সম্মানে কয়েকটি আসনে প্রার্থী দেবে না এনসিপি। উদাহরণ হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আসনগুলো ফাঁকা রাখার দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বক্তব্য তুলে ধরেন নাহিদ।
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া সর্বাধিক আসনে আমরা শাপলা কলির জন্য প্রার্থী দিব। বাংলাদেশের ইতিহাসে নির্বাচনী সংস্কৃতি হিসেবে দেখেছি, যাদের টাকা আছে, যারা এলাকায় গডফাদারগিরি করে তারাই নির্বাচনে দাঁড়ায়। আমরা এবার সেই সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জ করতে চাই।’
নির্বাচনী জোট প্রসঙ্গে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘সমঝোতা বা জোট রাজনৈতিক বা আদর্শিক জায়গা থেকে হতে পারে। যদি সে রকম কোনো সম্ভাবনা তৈরি হয়, যেমন জুলাই সনদের বিষয়টা আছে। জুলাই সনদে সংস্কার দাবিগুলোর সাথে যদি কোনো দল ঐক্যবদ্ধ বা সংহতি প্রকাশ করে, সেক্ষেত্রে আমরা জোটের বিষয়টা হয়তো বিবেচনা করব। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত এককভাবেই এগোচ্ছি।’ আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে এনসিপি প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করবে বলেও জানান নাহিদ।
গত বছরের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের ছররা গুলিতে এক চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন গাজী সালাউদ্দিন (৪৫)। অপর চোখেও দেখছিলেন ঝাপসা। মুখমণ্ডলের পাশাপাশি গলায়ও একাধিক গুলি লেগেছিল তার।
চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, গলায় লাগা গুলির স্পিন্টার শ্বাসনালী ছুঁয়ে আছে, এটি বের করা দুঃসাধ্য। শরীরে এ স্পিন্টার নিয়েই ১৫ মাস পর গত ১৬ অক্টোবর রাতে মারা যান এ ‘জুলাই যোদ্ধা’।
তার পরিবারের সাথে সাক্ষাতের পর নাহিদ সাংবাদিকদের দেয়া বক্তব্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত চিকিৎসা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সারা দেশে অনেক জুলাইযোদ্ধা রয়েছেন। আহতদের সুচিকিৎসার দায়িত্ব অন্তর্র্বর্তী সরকার সম্পূর্ণরূপে পালন করতে পারেনি। ফলে এখনো লাশের সারি বাড়ছে। বাড়ছে শহীদের সংখ্যাও।
আন্দোলনে আহতদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, হয়তো সাময়িক একটা চিকিৎসা অনেকেই পেয়েছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসাগুলো যদি অব্যাহত না থাকে, তাহলে এ রকম (সালাউদ্দিনের মৃত্যু) ঘটনা কিন্তু ঘটতে থাকবে। ফলে নির্বাচনের ডামাডোলে যাতে আহত ভাই ও শহীদ পরিবারগুলোর কথা ভুলে না যাই।
গাজী সালাউদ্দিনের কবরও জিয়ারত করেন নাহিদ ইসলাম। এ সময় তার সাথে ছিলেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন, দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক শওকত আলী, কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু প্রমুখ।



