হাসিনা আমলে মিথ্যা মামলাসহ শত কোটি টাকা লুটের অভিযোগ

সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান

Printed Edition

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের ট্রান্সপোর্ট ও স্টিল খাতের অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান এরশাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এরশাদ আলী অভিযোগ করেছেন, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে তাকে তৎকালীন বিরোধী দল বিএনপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অর্থদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকারে পরিণত করা হয়। একের পর এক মিথ্যা মামলায় হয়রানি করে প্রতিষ্ঠান লুটপাট ও দখল করা হয়েছে। তিনি গতকাল রাজধানীর মগবাজারে একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, এই লুটপাটের নেতৃত্বে ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার বড় ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান জ্যোতি। এ ছাড়া সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও রাজশাহীর মেয়র খায়রুজ্জামান খান লিটন। তাদের হাতিয়ার ছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একাধিক কর্মকর্তা। তারা ষড়যন্ত্র করে আমাকে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে উৎখাত করেছে। আমাকে বিএনপির অর্থদাতা তকমা দিয়ে একের পর এক রাজনৈতিক মামলা, হামলা চালানো হয়। আমার প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়, বাসা, ট্রাক, গুদাম ও স্টিল কারখানার শত শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি লুট করেছে।

তিনি বলেন, ২০১০ সালের পর রাজনৈতিক বিরোধের জেরে আমাকে বিএনপির অর্থদাতা হিসেবে চিহ্নিত করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একের পর এক মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার ও কারাবন্দী করা হয়। সব মিলিয়ে মামলার সংখ্যা এখন ৪২টি। ২০১০ সাল থেকে একে একে এরশাদ গ্রুপের কলাবাগানের নাসির ট্রেড সেন্টারে প্রধান কার্যালয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জ্যোতি দখল করে। ধানমন্ডির বাসভবন তাদের ক্যাডার গোল্ডেন খোকনকে দিয়ে দখল করায়, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের গুদাম দখল করে নেয়।

এ ছাড়া সোনারগাঁওয়ের জংদা রি-রোলিং মিলস ও ডেমরার স্টিল মিল শামীম ওসমানের সহযোগী ও শীর্ষ সন্ত্রাসী আজিজুর রহমান আজিজ দখলে নেয়। এই আজিজের নেতৃত্বে আমার দুই কারখানার ২৫০ কোটি টাকার মেশিনসহ মালামাল লুট করা হয়। এমনকি আমার ট্রান্সপোর্ট ব্যবসার ১৩৭টি ট্রাকটি এখনো তাদের দখলে রয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ২০ বিঘা জমির মাটি লুট করে জলাশয়ে পরিণত করা হয়েছে। আজিজ বাহিনীর লোকেরা এলাকায় মহড়া দিচ্ছে। আজিজের হাতে নির্যাতিতরা এখন মুখ খুলছে। আমরা চাই আদালত যেন এই সন্ত্রাসীকে জামিন না দেন। তারা টাকা দিয়ে বের হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা চাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং আমাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আদালত তাকে জামিন না দেয়।

এ সময় তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে তাকে বারবার মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেয়ার অভিযোগ করে বলেন, টাকার কারণে আমি বেঁচে ফিরেছি। ২০১৭ সালে এভাবে তিনবার আমাকে তুলে নেয়া হয়। প্রতিবার ৫০ লাখ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। সেই সময়ে ডিবির ডিসি আব্দুল বাতেন ও এডিসি লাকী আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে। টাকা পেলে তারা ছেড়ে দিত। শুধু আর্থিকভাবে নয় মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন উল্লেখ করে এরশাদ আলী বলেন, দীর্ঘদিন কারাবন্দী থাকায় আমার ৮০ শতাংশ কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছি। বর্তমানে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছি।