ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের ছায়ায় চীন-আসিয়ান মুক্তবাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর

Printed Edition
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং-এর উপস্থিতিতে আসিয়ান-চীন মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল ৩.০ হালনাগাদ প্রোটোকল স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয়  : ইন্টারনেট
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং-এর উপস্থিতিতে আসিয়ান-চীন মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল ৩.০ হালনাগাদ প্রোটোকল স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয় : ইন্টারনেট

আলজাজিরা

চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ান তাদের বিদ্যমান মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে “ভার্সন ৩.০”-তে উন্নীত করেছে। গতকাল মঙ্গলবার কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ৪৭তম আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।

চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের মতে, নতুন সংস্করণটি অবকাঠামো, ডিজিটাল ও সবুজ রূপান্তর, বাণিজ্য সহজীকরণ এবং জনগণের মধ্যে বিনিময়- এই চারটি খাতে সহযোগিতা বাড়াবে। ২০১০ সালে কার্যকর হওয়া প্রথম চুক্তির ভিত্তিতেই এই উন্নয়ন ঘটেছে।

চীন ও আসিয়ান বর্তমানে একে অপরের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০২৫ সালের প্রথম নয় মাসেই দুই অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য ৭৮৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯.৬ শতাংশ বেশি। এই প্রবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে “চায়না প্লাস ওয়ান” সরবরাহ শৃঙ্খলা, যা ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চীনবিরোধী শুল্ক নীতির পর গড়ে ওঠে।

সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে লি কিয়াং বলেন, “বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ফলপ্রসূ হয়েছে, বাণিজ্য প্রবাহ স্থিতিশীলভাবে বাড়ছে এবং আসিয়ান সরকারগুলো জনগণের মধ্যে আরো ঘনিষ্ঠ বিনিময়কে উৎসাহিত করছে।” তিনি আরো বলেন, “আমরা উন্নতমানের অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রত্যাশা করছি।”

হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ঝিওউ চেন আল জাজিরাকে বলেন, “এই চুক্তি এমন সময়ে এসেছে, যখন চীন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্য উত্তেজনার মুখোমুখি। আসিয়ান এখন চীনের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসাথে আসিয়ানও এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে।”

লি তার বক্তব্যে ট্রাম্পের শুল্ক নীতির সমালোচনা করে বলেন, “একতরফা ও রক্ষণশীল নীতিমালা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক শৃঙ্খলাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। বহিরাগত শক্তিগুলো আমাদের অঞ্চলে হস্তক্ষেপ করছে এবং অনেক দেশ অন্যায়ভাবে উচ্চ শুল্কের শিকার হয়েছে।”

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও রোববার সম্মেলনে অংশ নেন এবং কম্বোডিয়া ও মালয়েশিয়ার সাথে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এ ছাড়া থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের সাথে কাঠামোগত চুক্তিও সম্পন্ন হয়। এই চুক্তিগুলোতে ১৯-২০ শতাংশ “পারস্পরিক শুল্ক” হার নির্ধারণ করা হয়েছে, যা এ বছরের শুরুতে প্রস্তাবিত হয়েছিল।

ট্রাম্পের আসন্ন দক্ষিণ কোরিয়া সফরে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সাথে তার বৈঠকে শুল্ক ও বাণিজ্য বাধা প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, দুই পক্ষ একটি “ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট”-এ পৌঁছেছে, যা সম্ভাব্য ১০০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি এড়াতে সহায়ক হবে।

চীন সম্প্রতি রেয়ার আর্থ মিনারেল রফতানিতে নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছে, যার জবাবে ট্রাম্প নভেম্বর ১ তারিখ থেকে চীনা পণ্যে ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। বেসেন্ট বলেন, “এই চুক্তি দুই পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তা করবে।”