বেনাপোল (যশোর) সংবাদদাতা
যশোরের শার্শায় গোড়পাড়া লাইকোর বিলে ১৫ একর (৪৫ বিঘা) খাস জলাশয় জাল কাগজপত্র করে জোরপূর্বক দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। বিগত ১৭ বছর ‘যুব সমবায় মৎস্যজীবী সমিতি’র সদস্যদের তাড়িয়ে সরকারি এই জমি দখল করে রেখেছে তারা। এতে উপার্জনের উৎস হারিয়ে অসহায়ের জীবন যাপন করতে হচ্ছে ৩৫-৪০টি পরিবারকে।
তবে দখলকারীরা অভিযোগ অস্বীকার করে বলন, ক্রয় সূত্রে জমির মালিক হয়েছেন তারা। অন্য দিকে ভূমি অফিস বলছে, সরকারের খাস জমি উদ্ধারে ইতঃমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। দ্রুত ওই জলাশয় দখলমুক্ত করতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এলাকার লোকজন ও মৎস্যজীবীরা জানান, শার্শা উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে নিজামপুর ইউনিয়নের গোড়পাড়ায় অবস্থিত বড়বাড়ি এলাকায় লাইকার বিল। স্বাধীনতার পর থেকে ওই এলাকার যুব সমবায় সমিতির মাধ্যমে ৩৫-৪০টি মৎস্যজীবী পরিবার সেখানে মাছ চাষ করে আসছে। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় এলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা এ জমি নিজেদের দখলে নিয়ে জাল দলিল করে ভোগ দখল করে আসছে। এলাকার ভূমিহীন এবং সমবায়ের মাধ্যমে যারা এ জমি ভোগ দখল করত তাদের লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়।
স্থানীয় ভুক্তভোগীরা বলেন, লাইকোর বিলের গোড়পাড়া মৌজার ১৫ একর অর্থাৎ ৪৫ বিঘা জমি ভূমিদস্যু ওই গ্রামের মোকছেদের ছেলে মতিয়ার রহমান, নজরুল ইসলাম, আলীমুর এবং আব্দুল ও একই গ্রামের শাহাদতের ছেলে আব্দুস সাত্তার ও আলীম জাল দলিলের মাধ্যমে এ জমি জবর দখল করে সেখানে তারা মাছ ও ধান চাষ করছে। এ ছাড়াও সরকার কর্তৃক ভূমিহীনদের মাঝে যে জমি দলিল করে দিয়েছিল সেসব জমিও তারা জাল দলিলের মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে।
এতে মৎস্যজীবীরা বেকার হয়ে পড়েছে। পরবর্তীতে ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর ভুক্তভোগীরা ভূমি অফিস ও উপজেলা প্রশাসনে তাদের জমি ফেরত পাওয়ার জন্য অভিযোগ দায়ের করেন। তাদের রুটি-রুজির একমাত্র উৎস হারানো জমি উদ্ধারে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন মৎস্যজীবীরা।
এ দিকে জোর করে ভোগ দখলে অভিযুক্ত পরিবারের সদস্য মতিয়ার রহমান বলেন, ৮০’র দশকে গোড়পাড়া গ্রামের কেরামত, লক্ষণপুর গ্রামের মিজানুর রহমান, আব্দুল ও রয়েশ চন্দ্রের কাছে থেকে আমরা মোট ১৮ বিঘা জমি ক্রয় করি। এসব জমির খাজনাও আমরা দিয়ে আসছি।
জমি কেনার ৩০ বছর পর কেন দখল করতে এলেন? জানতে চাইলে তারা বলেন, কিছু আইনি প্রক্রিয়ার কারণে ওই জমি দেরিতে দখল করি।
গোড়পাড়া গ্রামের শাহাদতের ছেলে আব্দুর সাত্তার, আব্দুল আলিম, আব্দুল হাই ১১ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন। যা নিয়েও অনেক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। সরকার যেসব জমি ভূমিহীন পরিবারকে দলিল করে দিয়েছিল ওই জমিও বিভিন্ন কৌশলে তারা তিন ভাই জাল দলিলের মাধ্যমে নিজেদের দখলে নেয়। সেই সাথে ওই সব জমির খাজনাও ২০২৬ সাল পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে বলে তারা জানান।
এ বিষয়ে লক্ষণপুর ইউনিয়নের ভূমি অফিসের নায়েব আবুল খায়ের জানান, এসব জমি এক হাত থেকে অন্য হাতে বারবার বদল হয়েছে। সরকার যেসব জমি ভূমিহীনদের মাঝে দলিল মারফত দিয়েছিল তারাও কিছু কিছু বিক্রি করে গেছে। তবে এসব জাল দলিল কি না তা তিনি জানেন না। তবে আব্দুল ছাত্তারের জমিতে ‘ক’ চিহ্নিহ্নত লাল দাগ রয়েছে। এটা সরকারের নিষেধাজ্ঞার চিহ্নহ্ন। জরিপের মাধ্যমে এ জমিতে আমরা লাল পতাকা উত্তোলন করে দিবো।



