ফ্যাসিবাদ আমলের গুম-খুন-হয়রানি

রাজশাহীতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী আমলে ৩০ জনের বেশি গুমের শিকার

গায়েবি মামলা, হামলা ও নিপীড়ন ছিল নিত্যঘটনা

Printed Edition

মুহা: আবদুল আউয়াল রাজশাহী ব্যুরো

মতাচ্যুত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রাজশাহীতে গায়েবিসহ বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলা, হামলা ও জুলুম-নিপীড়ন ছিল নিত্য ঘটনা। পাশাপাশি গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার কারণে সাধারণ মানুষ ছিল খুবই উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত। এক ধরনের ভীতি নিয়ে পথ চলতে হতো তাদের। এ অবস্থা থেকে রেহাই পাননি ভিন্নমতের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাও। আওয়ামী লীগের বিগত দেড় দশকে রাজনৈতিক কারণে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বহু নেতাকর্মী ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছেন। বছরের পর বছর তারা বাড়িতে ঘুমাতে পারেননি।

মানবাধিকার সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যানুযায়ী, ওই সময়ে রাজশাহীতে হাজারো রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সাধারণ নাগরিকের নামে হয়রানিমূলক মামলা, হামলা ও নির্যাতনসহ ৩০ জনের বেশি ব্যক্তিকে গুম করা হয়। এদের মধ্যে কোনো ব্যক্তির লাশ পরে পাওয়া গেলেও এখনো পাঁচজনের হদিস পায়নি পরিবার। জঙ্গি (উগ্রবাদী) নাটক সাজিয়ে একই পরিবারের নারী-পুরুষসহ পাঁচজনকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনাও ঘটে। ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে হত্যা করা হয় অন্তত ২০ জনকে। শহর ও গ্রাম সব জায়গাতেই ছিল মতাসীনদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড। যারা এসবের প্রতিবাদ করেছেন তাদের কেউ কেউ গেছেন জেলে, আবার শাস্তি হিসেবে কাউকে কাউকে করা হয়েছে নিরুদ্দেশ। ফ্যাসিবাদী সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিউৎসাহী কিছু সদস্য এসব কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে, রাজশাহীতে শেখ হাসিনার শাসনামলের দেড় দশকে সে সময়ের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনের ১১ নেতাকর্মী খুন হন এবং আহত হন সহস্রাধিক। রাজশাহী মহানগরী ও জেলায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের অন্তত ১৯ জন নেতাকর্মী শহীদ হন। পুলিশ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুলিতে আহত হয়েছেন সহস্রাধিক। আর পঙ্গুত্ববরণ করেছেন অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীকে আসামি করে গায়েবি মামলা দেয়া হয়েছে অন্তত ৮০০টি। এতে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন কেন্দ্রীয় আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও রাজশাহী মহানগরী আমির আতাউর রহমানসহ তৃণমূলের হাজারো নেতাকর্মীকে। নেতাকর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ জেল খেটেছেন ৩৫ থেকে ৪০ বার পর্যন্ত।

রাজশাহী মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আলী আশরাফ মাসুম নয়া দিগন্তকে বলেন, মতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গায়েবি ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক অন্তত এক হাজারের মতো মামলা দায়ের হয়েছে। যার অধিকাংশই কথিত নাশকতা ও বিস্ফোরকসংক্রান্ত। এই মামলাগুলোর বাদি ৯৯ ভাগই পুলিশ। আবার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাদি হয়েও করেন কিছু মামলা।

এ দিকে রাজশাহী জেলা আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট রইসুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের শাসনামলে জেলায় অন্তত দেড় শ’ গায়েবি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক হয়রানিমূলক অন্যান্য মামলার সংখ্যা আরো বেশি।

জামায়াত শিবিরের ওপর হামলা-মামলা : ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হল দখল নিয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্রশিবিরের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। ওই সময় সংঘর্ষকালে ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক খুন হয়। ঘটনার পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম বাদি হয়ে শিবিরের ৩৫ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখসহ এবং অজ্ঞাত আরো অনেক শিবির নেতাকর্মীর নামে নগরীর মতিহার থানায় একটি মামলা করেন। এই মামলাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় হয়রানিমূলক মামলা, হামলা ও নির্যাতন। পরে এ মামলায় অভিযুক্ত করা হয় জামায়াতের তৎকালীন আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, রাজশাহী মহানগর আমির আতাউর রহমান, রাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি শামসুল আলম গোলাপ ও সেক্রেটারি মোবারক হোসেনসহ ১১০ জনকে।

গুম : মানবাধিকার সংগঠন অধিকার’র রাজশাহী সমন্বয়কারী মঈন উদ্দিনের দেয়া তথ্যানুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকের মধ্যে রাজশাহীতে র‌্যাব এবং পুলিশের হাতে ৩০ জনের বেশি ব্যক্তি গুমের শিকার হন। তাদের প থেকে প্রায় সবাই গুম কমিশনে অভিযোগ দিয়েছেন। গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে কোনো ব্যক্তির লাশ পরে পাওয়া গেলেও পাঁচজন পরিবারের কাছে এখনো ফেরেনি। তবে তাদের মধ্যে বেশির ভাগ ফিরে এলেও কেউ কেউ মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।

স্বজন ও প্রত্যদর্শীদের ভাষ্যমতে, ‘র‌্যাব, পুলিশ বা অন্য সরকারি এজেন্সির পরিচয় দিয়ে মধ্যরাতে এসে তল্লাশির নামে বা জোর করে দরজা ভেঙে ঢুকে কাউকে ধরে নিয়ে গেলে, তার ওপর নেমে আসত ভয়াবহ নির্যাতন। পরে কোন জনশূন্য বা ফাঁকা স্থানে লাশ পড়ে থাকত অথবা হদিস পাওয়া যেত না। আর সর্বশেষ স্থান ছিল জেলখানা। যেখানে অজ্ঞাত কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নীরবতা ছিল স্পষ্ট। গুম হয়ে যাওয়া মানুষের অধিকাংশই ছিল রাজনৈতিক কর্মী ও শিার্থী।’

২০১৭ সালে গুম হওয়া বিএনপি কর্মী মুরসালীনের ছেলে রাজশাহী কলেজের শিার্থী সাইফুল ইসলাম সাগর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন ‘বিভিন্ন সময়ে চলতে ফিরতে একাকিত্বে আমার বাবা এসে বলে, আমাকে এখনো বের করলি না তোরা, আমাকে বের কর। আমি বাবার সাথে হাত ধরাধরি করে স্কুলে ও প্রাইভেট পড়তে যেতাম। আট বছর ধরে বাবার দেখা মেলেনি, আমি বাবার বুকে মাথা রেখে কান্না করতে চাই। আমি রাতে ঘুমাতে পারি না।’ গুম হওয়া আরেকজন আবদুল কুদ্দসের স্ত্রী জামিল আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী জীবিত না মৃত, আমার সন্তানরা কি পিতৃহারা? এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জানতে চাই। তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রশ্ন করেন, আল্লাহর নিকট আমার স্বামীর জন্য কবরের আজাব থেকে মুক্তি চাইব, নাকি সুস্থতার জন্য দোয়া চাইব?’

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ২০১৬ সালে জামায়াতের কর্মী ইসমাইল হোসেনকে গুম করে নিয়ে যায় র‌্যাব-৫-এর তৎকালীন রেলওয়ে কলোনি ক্যাম্পের সদস্যরা। ইসমাইল এখন পর্যন্ত ফিরে আসেনি। গোদাগাড়ীর মাটিকাটা ইউনিয়নের রেলগেট এলাকার আবদুর রাজ্জাক শামিরকে গুম করে র‌্যাব। প্রায় তিন মাস রেখে শারীরিক নির্যাতন করার পর অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের কাছে তাকে হস্তান্তর করে। কিছুদিন পর রাজ্জাক মারা যান। ২০১৮ সালের ১২ মে গোদাগাড়ী পৌর এলাকার বারুইপাড়া গ্রামের আমিনুল ইসলামকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে তিন মাস ১৮ দিন গুম করে রাখে র‌্যাব -৫। পরে আগ্নেয়াস্ত্র গোলাবারদ ও ইসলামী বই দিয়ে মামলা দায়ের করে।

মাস্টারমাইন্ড ছিল কারা : আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলে সবচেয়ে বেশি খুন হয়েছে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যেই। এই সময়ের মধ্যে র‌্যাব ও পুলিশের হাতে অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মী নিহত হন। এতে অতি উৎসাহী ছিলেন র‌্যাব ও পুলিশের ছয় শীর্ষ কর্মকর্তা। তারা হলেন- র‌্যাব-৫-এর তৎকালীন অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, আরএমপির কমিশনার এস এম মনির-উজ-জামান ও ডিআইজি মো: শামসুদ্দিন, ডিসি নাহিদ হোসেন, ডিবির ওসি আলমগীর হোসেন ও ডিবির ওসি জিয়াউল হক। তাদের সময়েই রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি নির্যাতন চলেছে।

মানবাধিকার সংগঠন ও একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধ নাটকের মাস্টারমাইন্ড ছিল এই ছয় কর্মকর্তা। তাদের পরিকল্পনায়, বিশেষ করে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের ধরে এনে নির্মম নির্যাতনের পর কখনো ক্রসফায়ার, আবার কখনো ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নাম দিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানো হতো।

বিচারবহির্ভূত হত্যা : ২০১৩ সালের ২ মে ঢাকা থেকে শিবির কর্মী শাহাদাত হোসেনকে আটক করে গুম করে রাখে র‌্যাব। তার হাত-পা ভেঙে দিয়ে ১২ মে গভীর রাতে চোখ বেঁধে এনে রাজশাহী নগরীর বিনোদপুরের বেতার মাঠে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র নাটক সাজিয়ে শাহাদাতকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

শাহাদাতের স্ত্রী রিনা খাতুন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শাহাদাতকে আটকের পর নির্মমভাবে নির্যাতন করেছিল র‌্যাব। দুই হাত ও দুই চোখ বেঁধে এনে বেতার মাঠে তাকে হত্যা করে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজায় র‌্যাব।

২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি রাজশাহী নগরীর বিনোদপুর ইসলামিয়া কলেজের শিক ও জামায়াত কর্মী নুরুল ইসলাম শাহীনকে (৪৫) নগরীর মালোপাড়া এলাকায় নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে আটক করা হয়। পরদিন নগরীর আশরাফের মোড় এলাকায় তার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। শাহীনের ছোট ভাই ড. ফজলুল হক তুহিন নয়া দিগন্তকে বলেন, তৎকালীন সিটি মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের নির্দেশে আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন তৎকালীন আরএমপি কমিশনার শামসুদ্দিন ও ডিবি পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা। তিনি দ্রুত বিচার শেষ করে আসামিদের কঠোর শাস্তি দাবি জানিয়েছেন।

২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রাজশাহীতে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তথ্য সম্পাদক মোহাম্মাদ শাহাবুদ্দিন। আগের দিন ৫ ফেব্রুয়ারি কাটাখালী পৌরসভা এলাকায় সড়ক থেকে শাহাবুদ্দিনসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ। পরে গভীর রাতে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে পুলিশ অমানুষিক নির্যাতনের পর তাদের গুলি করে। পরে শাহাবুদ্দিনকে মৃত অবস্থায় এবং অপর দুই শিবির কর্মী হাবিবুর রহমান এবং মফিজুল ইসলামকে পায়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।

২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শিবিরকর্মী শহিদুল ইসলাম। তার বাড়ি নগরীর ভাঁড়ালিপাড়ায়। খড়খড়ি বাইপাস সড়কের বড়বনগ্রাম এলাকায় তার গুলিবিদ্ধ লাশ পড়েছিল। এর কয়েকদিন আগে শহিদুলকে আটকের পর গুম করে রাখে পুলিশ। পরিবারের অভিযোগ, তৎকালীন আরএমপি কমিশনার মো: শামসুদ্দিনের পরিকল্পনায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়।

২০০৯ সালের ১৩ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সেক্রেটারি শরিফুজ্জামান নোমানীকে প্রকাশ্য কুপিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা।

জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক মেয়র ও এমপি মিজানুর রহমান মিনু নয়া দিগন্তকে বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে আওয়ামী লীগের ক্যাডার ও প্রশাসনের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীর অতিউৎসাহী সদস্যরা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে। তিনি বলেন, রাজশাহীতে আওয়ামী শাসনামলের দেড় দশকে বিএনপি এবং এর সহযোগী সংগঠনের ১১ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গুম করা হয়েছে তিনজনকে। টার্গেট করে করে হত্যা এবং পঙ্গু করা হয়েছে। আহত হয়েছেন অসংখ্য নেতাকর্মী। গায়েবিসহ হয়রানি মূলক শত শত মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় তিনিসহ আসামি হয়েছেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী। এর পরও বিগত ১৬ বছর দলের নেতাকর্মীদের ছায়ার মতো আগলে রেখেছি। সরকারের হুমকির পরোয়া না করে নেতাকর্মীদের নিয়ে পালন করেছি দলীয় কর্মসূচিগুলো। আমাকেসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে।

রাজশাহী মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্য শাহাদৎ হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার শাসনামলে রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি শহীদ হয়েছেন জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজশাহীতে অন্তত ১৯ জন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। এরমধ্যে মহানগরীতে ১২ জন ও জেলায় সাতজন শহীদ হন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- শরিফুজ্জামান নোমানী, হাফিজুর রহমান শাহীন, ওমর শাহাদত, রাশিদুল হক রিন্টু, নুরুল ইসলাম শাহীন, সাফিকুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম, শাহাবুদ্দিন, আলী রায়হান, হাফিজুল রহমান, হাফেজ রশিদুল ইসলাম ও আবু রায়হান। এদের মধ্যে পাঁচজনই রাবি শিার্থী ও শিবিরের নেতাকর্মী। এদের প্রত্যেককে তুলে নিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। যার সাথে জড়িত পুলিশসহ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। তিনি আরো বলেন, সবশেষ জুলাই বিপ্লবের দিন ৫ আগস্ট শহীদ হন ছাত্রশিবির কর্মী সাকিব আনজুম। আর একই বছরের ৮ আগস্ট শহীদ হন ছাত্রশিবিরের রাজশাহী মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আলী রায়হান।

জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী জেলার সেক্রেটারি গোলাম মর্তুজা নয়া দিগন্তকে বলেন, ২০১০ সালে দীর্ঘ ৪৭ দিন আমাকেও গুম করে রাখা হয়েছিল। গুম হয়ে অসহনীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী শাসনামলে রাজশাহী জেলা জামায়াতের পাঁচজন নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। তারা হলেন- হাফেজ আমিরুল ইসলাম, মুজাহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, হাফেজ রাশিদুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ ওমর নাফিস শাহাদাত। এ ছাড়া গত ১৫ বছরে রাজশাহী জেলায় জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীদের নামে দুই শতাধিক মামলা দেয়া হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে।