যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসন

বিএনপির ৫ জামায়াতের ১ জন অন্যান্য দলের ২ প্রার্থী

Printed Edition
বিএনপির ৫ জামায়াতের ১ জন অন্যান্য দলের ২ প্রার্থী
বিএনপির ৫ জামায়াতের ১ জন অন্যান্য দলের ২ প্রার্থী

এম এ রহিম চৌগাছা (যশোর)

আগামী নির্বাচনকে ঘিরে ইতোমধ্যে সরগরম হয়ে উঠছে যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনের সংসদীয় এলাকা। সম্ভব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির পাঁচজন, জামায়াতের একজন এবং অন্যান্য দলের আরো দুই-তিন প্রার্থী। জনসমর্থন পেতে তাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠছে এলাকার গ্রাম ও মহল্লা। দলীয় মনোনয়ন পেতে তারা সভা-সমাবেশ ও জনসংযোগ করে যাচ্ছেন।

এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী, যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খাঁন, ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবিরা নাজমুল মুন্নি, সাধারণ স¤পাদক ইমরান হাসান সামাদ নিপুণ, চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম ও যশোর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: ইসহাক। তারা সবাই ধানের শীষের মনোনয়ন পাবেন বলে শতভাগ আশাবাদী। প্রার্থী ও সমর্থকরা বলছেন উচ্চ মহলের গ্রিন সিগন্যাল পেয়েই তারা মাঠে নেমেছেন। তবে প্রচারে এগিয়ে রয়েছেন জহুরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান খাঁন ও সাবিরা নাজমুল মুন্নি।

জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ডাক্তার মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। তার নেতৃত্বে দুই উপজেলার সব ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত মেডিক্যাল ক্যা¤প ও সড়ক সংস্কার সাধারণ মানুষের মাঝে সাড়া ফেলছে।

যশোর-২ সংসদীয় আসনে ২২টি ইউনিয়ন এবং দু’টি পৌরসভা রয়েছে। সমানসংখ্যক ১১টি করে ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা রয়েছে ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলাতে। এ আসনে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন আবুল ইসলাম। ১৯৭৯ সালে বিএনপি থেকে নির্বাচিত হন এম এ বদরুল আলী। ১৯৮৬ সালে এরশাদের আমলে ঝিকরগাছা-চৌগাছা উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনটি হয়ে যায় যশোর-২। সেবার এমপি হন জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা মকবুল হোসেন। ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি হন মীর শাহাদাতুর রহমান। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে এই আসন থেকে এমপি হন আওয়ামী লীগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। ১৯৯৬ সালেও আওয়ামী লীগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এমপি নির্বাচিত হন। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এমপি হন বিএনপির অ্যাডভোকেট কাজী মুনিরুল হুদা। ২০০১ সালে জামায়াতে ইসলামী থেকে এমপি নির্বাচিত হন মুহাদ্দিস আবু সাঈদ মোহাম্মদ শাহাদৎ হোসাইন।

২০০৮ সালে প্রার্থী করা হয় সাবেক কূটনীতিক মরহুম মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদকে। তার পৈতৃক ভিটা ঝিকরগাছায় হলেও কবে, কখন তিনি এলাকায় থেকেছেন তা কেউ জানেন না। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের একক নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে এমপি হন অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম। ২০১৮ সালে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ডাক্তার নাসির উদ্দিন এবং ২০২৪ সালে ডাক্তার তৌহিদুজ্জামান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

জেলা বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান খান বলেন, যশোর-২ আসনে দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। আমি গত ১২-১৩ বছর ধরে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে থাকছি। কারাবন্দি নেতাকর্মীদের জামিনের ব্যবস্থা করেছি। নিজে মিথ্যা মামলায় অসংখ্যবার কারাগারে বন্দী থেকেছি। দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করে গেছি। তাই আমি বিশ্বাস করি, তৃণমূলের দাবি অনুযায়ী দল আমাকে মূল্যায়ন দেবে।

ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি নাজমুল ইসলামের স্ত্রী সাবিরা নাজমুল মুন্নি। ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুন্নি দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। তিনি বলেন, দল যখন যে দায়িত্ব দিয়েছে সাহসিকতার সাথে পালন করেছি। এ আসনে মোট ভোটারের ৫২ শতাংশই নারী উল্লেখ করে মুন্নি বলেন, খুলনা বিভাগের মধ্যে তিনিই নারী প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন।

বর্তমান ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান সামাদ নিপুনের ত্যাগ শ্রম ও কর্মী মূল্যায়নে সবাইকে অনুপ্রাণিত করছে। তিনি বলেন, আমি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে এবং এ দুই উপজেলাকে মডেল উপজেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছি।

চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির নেতা জহুরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দলকে আমি সুসংগঠিত রেখেছি। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে এ আসন থেকে আমি বিজয়ী হবো বলে আশা করি।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মো: ইসহাক বলেন, দুর্দিনে যখন কেউ রাজি হয়নি, তখন আমি মনোনয়ন নিয়ে এই আসনে নির্বাচন করেছি। আমাকে এবারো দলের জন্য কাজ করতে বলা হয়েছে।

এ দিকে যশোর-২ আসনে জামায়াতে ইসলামী প্রার্থী ঘোষণা করেছে ছাত্রশিবিরের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি ডাক্তার মোসলেহ উদ্দীন ফরিদকে। শিশু হৃদরোগ ও ইনটেনসিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসকের জন্ম যশোর শহরের খড়কিতে। তিনি ইতোমধ্যে দুই উপজেলায় মেডিক্যাল ক্যাম্প ও বিভিন্ন সড়ক সংস্কারমূলক কাজ করে জনসাধারণের নজরে পড়েছেন। দুই উপজেলার সাধারণ ভোটারদের অভিমত জামায়াতের একক প্রার্থী মাঠে ময়দানে কাজ করছেন। সৎ মানুষের পক্ষেই তারা ভোট দেবেন।

এবি পার্টির প্রার্থী রিপন মাহমুদ বলেন, এবি পার্টি ভোটের নয়, রাজনৈতিক জোট করবে ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী কামাল হুসাইন বলেন, এ আসনে দল আমাকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। আমি জনগণের সাথে কাজ করতে চাই।