মো: আনোয়ার হোসেন আকুঞ্জী ডুমুরিয়া (খুলনা)
খুলনার ডুমুরিয়ায় নির্বিচারে শামুক নিধনের কারণে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। সচেতনতার অভাব, প্রশাসনের উদাসিনতা এবং চিংড়ি-পাঙ্গাশ ঘের ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যিক স্বার্থে এ প্রাকৃতিক প্রাণী নিধন সম্প্রতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
মৎস্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ডুমুরিয়ার ১৪টি ইউনিয়নে প্রায় ১৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ২০ হাজারের বেশি গলদা চিংড়ির ঘের এবং পাঁচ শতাধিক পাঙ্গাশ মাছের ঘের রয়েছে। এসব ঘেরে মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে শামুক। ফলে স্থানীয় বিল, খাল ও জলাশয় থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ শামুক সংগ্রহ দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং সেই শামুক বিক্রি করা হচ্ছে ঘের মালিকদের কাছে।
উপজেলার শাহপুর, হাসানপুর, রুদাঘরা, রংপুর, শলুয়া, গুটুদিয়া, ভা ারপাড়া, সরাফপুর, শোভনা, খর্ণিয়া, বান্দা, তালতলা ও সাহস এলাকায় গড়ে উঠেছে অস্থায়ী শামুক বিক্রয়কেন্দ্র। দরিদ্র মানুষ বিল ও জলাশয় থেকে শামুক কুড়িয়ে এনে বিক্রি করছে ঘের মালিকদের কাছে। ১০০টি ছোট-বড় শামুক বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। আর খোলস ছাড়ানো শামুকের দাম কেজিপ্রতি ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা। প্রতিদিন নাটোর, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, পাবনা, ঝালকাঠি ও কুষ্টিয়া থেকেও ট্রাকভর্তি করে শামুক আনা হচ্ছে ডুমুরিয়ায় বিক্রির জন্য।
এই কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারী ও শিশুরাও যুক্ত হচ্ছে। উপজেলার মধুগ্রাম এলাকার মনোয়ারা বেগম, আসমা খাতুন, ফিরোজা বেগম ও নাজমা বেগম জানান, তারা চুক্তিভিত্তিক প্রতিদিন দুই-তিন বস্তা শামুক ভেঙে ২০০-৩০০ টাকা আয় করেন। অভাবের তাড়নায় পরিবারের শিশুদেরকেও কাজে যুক্ত করছেন তারা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করায় তারা ত্বক ও শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন।
চাষিরা বলছেন, শামুকের মাংস খাওয়ালে চিংড়ি ও পাঙ্গাশ দ্রুত বাড়ে এবং দ্রুত বিক্রিযোগ্য হয়। ফলে তাদের লাভও বাড়ে। তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফেরদৌস খান বলেন, ‘শামুক ভেঙে পরিবারগুলো কিছু আয় করলেও যত্রতত্র খোলস ফেলার কারণে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।’
ডুমুরিয়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান রিগান বলেন, পানির প্রাকৃতিক ফিল্টার হিসেবে কাজ করে শামুক। এটি পানি শোধন এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু অতিরিক্ত শামুক নিধনের ফলে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, চিংড়ি ও পাঙ্গাশ চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে যাতে তারা বিকল্প খাদ্য ব্যবহার করেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সচেতন হন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শামুক নিধন শুধু জলজ প্রাণীর অস্তিত্বই নয়, বরং গ্রামীণ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপরও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলবে। তাই, এখনই সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রশাসনিক নজরদারি জরুরি। নইলে এক সময় ডুমুরিয়ার প্রকৃতিক ও জলজ প্রাণী হারিয়ে যেতে পারে।



