১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে

Printed Edition

গাজীপুর মহানগর প্রতিনিধি

গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অধ্যক্ষ মো: আলাউদ্দিন মিয়ার বিরুদ্ধে প্রায় ১৪ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ, স্কুল ভবনের একটি কক্ষ নিজের বোনের নামে অবৈধভাবে হস্তান্তর এবং কোচিং ও কেন্দ্র ফি বাবদ সংগৃহীত অর্থ তসরুপের অভিযোগে শিক্ষক-কর্মচারীরা তাকে অবিলম্বে বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির অধীনে থাকা তিনটি মার্কেটের ১৬১টি দোকানের ভাড়া ও পজিশন বিক্রি করে অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা গোপনে তসরুপ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে গভর্নিং বডির ৪৯ নম্বর সভায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে কমিটি সরেজমিন তদন্ত ও দলিলপত্র যাচাই শেষে ১৪ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকার আর্থিক অসঙ্গতি শনাক্ত করে ২৩ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

অভিযোগে আরো বলা হয়, অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া স্কুল ভবনের উত্তর পাশের প্রধান ফটকের পশ্চিম পাশে অবস্থিত মূল ভবনের একটি কক্ষ তার নিজ বোনের নামে পজিশন হস্তান্তর করেন; কিন্তু সেই বাবদ কোনো অর্থ প্রতিষ্ঠানের তহবিলে জমা দেননি। একইভাবে অনুমোদনবিহীনভাবে পুরনো ভবনের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ দ্বিতল মার্কেট নির্মাণ করে তার দোকান পজিশনের অর্থও গোপনে আত্মসাৎ করা হয়।

এ ছাড়া ২০২৫ সালের এইচএসসি কোচিং ফি ও এসএসসি-এইচএসসি কেন্দ্র ফি বাবদ সংগৃহীত ১৩ লাখ টাকাও আত্মসাত করেন।

এ ঘটনার পর গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে। শিক্ষক-কর্মচারীরা আত্মসাৎকৃত অর্থ উদ্ধার, অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়াসহ সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মো: আলাউদ্দিন মিয়া আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠন গাজীপুর জেলা স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি। তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের করা একাধিক মামলার আসামি। সম্প্রতি জামিনে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে পুনরায় অধ্যক্ষের পদে ফেরার জন্য তদবির চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের কবল থেকে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। প্রবীণ রাজনীতিক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ হাসান উদ্দিন সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষকে অবিলম্বে অপসারণ করা না হলে এর দায়ভার বর্তমান গভর্নিং বডিকে নিতে হবে।

এ দিকে এ ব্যাপারে বক্তব্য নেয়ার জন্য অভিযুক্ত অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: হারুন অর রশিদ বলেন, গভর্নিং বডির সভাপতি স্কুল মার্কেটের দোকান পজিশন হস্তান্তর সংক্রান্ত অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। ওই কমিটির তদন্তে ১৪ কোটি ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়। এ ছাড়া অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন মিয়া বিভিন্ন ফি বাবদ আরো প্রায় ১৩ লাখ টাকা স্কুলের হিসাবরক্ষক ও একজন শিক্ষকের কাছ থেকে নিয়ে যান। আমরা এসব টাকা ফেরত আনার চেষ্টা করছি।