নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি প্রদানসহ ছয় দফা দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে খেলাফত মজলিস। গতকাল রাজধানীর পল্টন কালভার্ট রোডস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, অধ্যাপক আবদুল জলিল, কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আমিনুর রহমান ফিরোজ, প্রশিক্ষণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, ঢাকা মহানগরী উত্তর সভাপতি মাওলানা সাইফ উদ্দিন আহমদ খন্দকার, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে খেলাফত মজলিস মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ২৪’র জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হাজারো শহীদের জীবন দান ও হাজার হাজার ছাত্র জনতার ত্যাগের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জাতির ঘাড়ে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটেছে। খুনি ফ্যাসিবাদী হাসিনা ও তার দোসরদের দ্রুত বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার গণদাবি পূরণ সময়ের দাবি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন-সহ অনেক ক্ষেত্রেই কাক্সিক্ষত অগ্রগতি সাধিত হয়নি এখনো। বিশেষ করে সংস্কারের জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিক আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন পক্ষ ছাড় দিয়ে হলেও অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে, যা জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ হিসেবে স্বাক্ষরের অপেক্ষায় আছে। কিন্তু অনেকে চাইছেন গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয় পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দিতে। কিন্তু যারাই নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসবেন তারা এসব বিষয় যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবে কি না সে বিষয়ে অতীত অভিজ্ঞতার কারণে জনমনে সন্দেহ রয়েছে। তাই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ বাস্তবায়নের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। অতি দ্রুত জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ঘোষণা করে তা কার্যকর করতে আইনি ভিত্তি প্রদান করতে হবে। এবং জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর ভিত্তিতেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। দাবিগুলো হলো- ১. অবিলম্বে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ ঘোষণা করা ও এর আইনি ভিত্তি দেয়া, ঘোষিত জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর ভিত্তিতেই ফেব্রুয়ারি ২০২৬’র জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা, জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর আইনি ভিত্তি প্রদানের জন্য আমাদের প্রস্তাবনা হচ্ছে-ক. জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ স্বাক্ষরের পর দুই মাসের মধ্যে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ-২০২৫ কে সাংবিধানিক ও আইনি মর্যাদা বা বৈধতা প্রদান করা। অথবা খ. জুলাই সনদে রাষ্ট্রীয় পলিসি বা ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়গুলো অর্ডিনেন্স বা নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করা। আর সংবিধানসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ঘোষণার মাধ্যমে আশু কার্যকর করা তবে শর্ত হচ্ছে যে, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে কোনো পরিবর্তন- পরিবর্ধন ছাড়াই সেগুলো (আনুষ্ঠানিক অনুমোদন) করতে সংসদ সদস্যগণ বাধ্য থাকবেন- এ মর্মে সব দল ও পক্ষের কাছ থেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করা।
২. পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদের উচ্চ কক্ষের সদস্য নির্বাচন করা। ৩. আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও তার দোসরদের অপরাধের বিচার দৃশ্যমান করা। ৪. আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সব দোসরদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থগিত ও নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা। ৫. নির্বাচনে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। অবৈধ অস্ত্র, পেশিশক্তি, কালো টাকার প্রভাবমুক্ত সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে এবং ৬. দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গানের শিক্ষক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
এসব দাবি আদায়ে খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে কর্মসূচি হলো- ১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল, ১৯ সেপ্টেম্বর শুক্রবার দেশের সব মহানগরীতে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল। আব্দুল কাদের বলেন, এর মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ এর আইনি ভিত্তি প্রদানের সুস্পষ্ট উদ্যোগ না নিলে পরবর্তীতে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।



