জাকির হোসেন সৈয়দপুর (নীলফামারী)
নীলফামারীর সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে রোগীদের খাবার পরিবেশনে চলছে চরম অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম। সময়মতো খাবার না দেয়া, পরিমাণে কম দেয়া এবং নিম্নমানের খাদ্য পরিবেশনের কারণে প্রতিদিনই ভোগান্তিতে পড়ছেন শত শত রোগী। বৃহস্পতিবার দুপুরের খাবার নির্ধারিত দুপুর ১২টার পরিবর্তে দেয়া হয় বেলা সাড়ে ৩টায়। এতে ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে অনেক রোগী হাসপাতালের বাইরে গিয়ে খাবার কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছেন।
ভুক্তভোগী রোগী ও স্বজনরা জানিয়েছেন, এই হাসপাতালের খাবার সরবরাহে বছরের পর বছর অনিয়ম চললেও কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। তারা অবিলম্বে সরকারি তদন্ত ও নতুন ঠিকাদার নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন, যাতে রোগীরা অন্তত সঠিক সময়ে মানসম্মত খাবার পেতে পারেন।
সরেজমিন দেখা যায়, ওই সময় পর্যন্ত বাবুর্চি মুরগির গোশতস কাটছিলেন, যা ছিল মাত্র ৯ কেজি যেখানে বরাদ্দ অনুযায়ী অন্তত ১০ কেজি থাকা উচিত ছিল। চুলায় তখন রান্না হচ্ছিল ভাত ও ডাল। বাবুর্চি জানান, প্রতিদিন সময়মতো রান্না হয়; কিন্তু আজ ঠিকাদার দেরিতে বাজার এনেছেন।
হাসপাতালের ঠিকাদার হিসেবে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক মহসিন ও তার সহযোগী কাজল। প্রায় দুই যুগ ধরে তারাই খাবার সরবরাহের দায়িত্বে আছেন। সরকারের পরিবর্তনের পরও ঠিকাদারি কার্যক্রমে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বরং অভিযোগ আছে, পালিয়ে থেকেও লোক পাঠিয়ে আগের মতোই দুর্নীতি ও অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
ঠিকাদারের প্রতিনিধি বাদশা জানান, আমার ছেলে বাবুল সাধারণত বাজার করে; কিন্তু সে অসুস্থ। তাই আমি আজ বাজার এনেছি বলে দেরি হয়েছে। সাংবাদিকরা মহসিনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি পরিচয় জানার পর ফোন কলটি কেটে দেন।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা দিনাজপুরের গছাহারা গ্রামের ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী তাহেরা বেগম (৬০) বলেন, রাতে ও সকালে খাবার পেলেও দুপুরে কিছুই দেয়নি। ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে বাইরে গিয়ে চিঁড়া আর কলা কিনে খেয়েছি। আরেক রোগী শাবানা (৪০) বলেন, গত রাতে ভর্তি হয়েছি। সকালে নাশতা পাইনি, এখন বিকেল গড়িয়ে গেলেও দুপুরের খাবারও দিচ্ছে না। তাই স্বামীসহ বাইরে গিয়ে খাবার কিনছি। রোগীর স্বজন আফরোজা (২৫) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুপুর ১২টার খাবার সাড়ে ৩টায় দিলে ওষুধ সময়মতো খাওয়া যায় না। এতে রোগীদের ক্ষতি হচ্ছে। সরকারি হাসপাতালে এমন অব্যবস্থাপনা মেনে নেয়া যায় না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালে খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন ধরে চলছে ব্যাপক অনিয়ম। বরাদ্দ অনুযায়ী প্রতিদিন ১০০ শয্যার জন্য রোগীপ্রতি ১০০ গ্রাম মাছ বা গোশত থাকার কথা। সেই হিসাবে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ কেজি গোশত-মাছ কেনা উচিত; কিন্তু বাস্তবে আট থেকে ১৫ কেজির বেশি কেনা হয় না। ফলে রোগীরা পান মাত্র ৫০ থেকে ৭০ গ্রাম খাবার। ডাল, সবজি ও চাল কেনা হয় নিম্নমানের, যাতে খরচ বাঁচিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আত্মসাৎ করা যায়।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে মহসিনুল হক মহসিন দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বছরের পর বছর ঠিকাদারির দখল ধরে রেখেছেন। সরকারের পরিবর্তনের পরও তার প্রভাব কমেনি; বরং আগের মতোই অনিয়ম অব্যাহত রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষ ও রোগীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পরে মুঠোফোনে ঠিকাদার মহসিনুল হক মহসিন বলেন, আমার লোক অসুস্থ থাকায় বাজার আনতে দেরি হয়েছে। এ নিয়ে কিছু লোক অযথা ঝামেলা করছে। এ বিষয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা: নাজমুল হুদা বলেন, মূল ঠিকাদার বর্তমানে পলাতক। নতুন ঠিকাদার নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হলেও আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে তা সম্ভব হয়নি। আজকে প্রতিনিধি অসুস্থ থাকায় খাবার পরিবেশনে দেরি হয়েছে। তবে খাবার কম দেয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।


