বাজার দর

বেড়েছে চাল-ডিমের দাম সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী

Printed Edition
রাজধানীর একটি সবজির দোকান : নয়া দিগন্ত
রাজধানীর একটি সবজির দোকান : নয়া দিগন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজারে বেড়েছে চাল-ডিমের দাম, সবজিরও ঊর্ধ্বমুখী। চলতি মাসের শুরুতে প্রতি ডজন ডিমের দাম ছিল ১২০ টাকা; যা এখন ঠেকেছে ১৫০ টাকায়। সহজ প্রোটিনের উৎস এ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ায় দারুণ অস্বস্তিতে পড়েছেন নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ। এ দিকে বাজারে চালের দাম বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই বেশি। এর মধ্যে বেশির ভাগ সবজিও মিলছে না প্রতি কেজি ৮০ টাকার নিচে। সাথে গত দুই সপ্তাহ ধরেই পেঁয়াজ, আদা ও এলাচের দাম বেড়েছে।

গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে, সব মিলিয়ে অনেকগুলো পণ্যের দাম একসাথে বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গড়পড়তা আয়ের মানুষ। অনেকে সাধ্যের মধ্যে চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, এখন মুদি দোকানে প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা হালি, ১৫০ টাকা ডজন। কোথাও এক ডজন নিলে ৫ টাকা কমে ১৪৫ টাকা রাখা হচ্ছে। মিরপুর দুয়ারীপাড়া এলাকায় দোকানি মফিজুর রহমান বলেন, দুই সপ্তাহ আগে ডিমের দাম ১২০ টাকা ডজন ছিল; যা এখন ৩০ টাকা বেড়েছে। তার পরও ডিমের সরবরাহ ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না।

এ দিকে বাজারে সবজির দামও চড়া। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টির কারণে অনেক এলাকার সবজি নষ্ট হয়ে সরবরাহ কমেছে, যার প্রভাব পড়েছে দামে। বাজারে প্রতি কেজি ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, বরবটি ও কাঁকরোল ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধরন ভেদে বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে, কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকার মতো। বিক্রেতাদের হিসেবে বর্তমানে ৬০ টাকার নিচে রয়েছে আলু ও পেঁপে। আর ৬০ থেকে ৮০ টাকার আশপাশে দাম রয়েছে শুধু ঢেঁড়শ, পটোল, মিষ্টিকুমড়াসহ হাতেগোনা দু-চারটি সবজির। অবশ্য কাওরানবাজার বা বড় পাইকারি বাজারে প্রতিটি সবজির দামই তুলনামূলক কম। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় শুক্রবার সবজির দাম কিছুটা বেড়ে যায়। এ দিকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। ৫০-৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। এর মধ্যে কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের সরবরাহ পর্যায়ে বিঘœ ঘটেছে। বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।

কাওরানবাজারে পাইকারি বিক্রেতা জুবায়ের আলী বলেন, উৎপাদন এলাকায় পেঁয়াজের দাম কয়েক দিন ধরে বেড়েছে। পাবনা-ফরিদপুর এলাকার মোকামে প্রতি মণ পেঁয়াজের দাম প্রায় ৪০০ টাকা বেড়েছে। বাজারে প্রতি ১০০ গ্রাম এলাচ আগে ৪০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন সেটি সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় উঠেছে। পাশাপাশি প্রতি কেজি আদার দাম ১৮০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২২০-২৫০ টাকা।

অন্য দিকে চালের চড়া দাম কমার কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি। মাস দেড়েক ধরে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে চাল। মোটা চালের কেজি এখন ৬০ টাকার বেশি। মাঝারি মানের একধরনের কিছু মিনিকেট ও নাজিরশাইল রয়েছে, যেটা শুধু ৬৫-৭০ টাকায় পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাকি সব চাল ৭৫-৮৫ টাকা কেজির মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর ভালো মানের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চালের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা ছুঁই ছুঁই।

এ দিকে জুলাই-আগস্ট মূলত ইলিশের ভরা মৌসুম। মৌসুমের শুরুতে ইলিশের সরবরাহ কম ছিল বিধায় চড়া দামে বিক্রি হতো রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন ছোট-বড় বাজারে। তবে মৌসুমের মধ্যভাগে বেড়েছে সরবরাহ। ফলে কিছুটা দাম কমেছে জাতীয় মাছ ইলিশ।

গতকাল মিরপুর-১২ নম্বর হাজী কুজরত আলী মোল্লা মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, দু’টি দোকানে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। এর মধ্যে এক দোকানে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৬০০ টাকায়। আরেক দোকানে ৮৫০ থেকে ৯০০ গ্রামের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ টাকায়।

দুই বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে যেখানে তিন হাজার থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা ইলিশের কেজি ছিল, এই সপ্তাহে তা কমে হয়েছে দুই হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ৬০০ টাকা। মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর মুসলিম বাজারে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ টাকায়। এ ছাড়া প্রতি কেজি জাটকা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। এই বাজারের বিক্রেতারাও বলছেন, ইলিশের দাম কিছুটা কমেছে।

কুজরত আলী মোল্লা মার্কেটে দুই হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার ৬৫০ টাকায় ইলিশ বিক্রি করছিলেন মোহাম্মদ সুকুর মোল্লা। তিনি বলেন, এই সপ্তাহে বাজারে প্রচুর মাছ। ছোট আকারের ইলিশ বেশি, দামও একটু কম। তিনি বলেন, দামের ফারাক হয় চট্টগ্রামের, পদ্মার ইলিশের জন্য। চট্টগ্রামের ইলিশের দাম কম। আমারটা পদ্মার, কেনাই বেশি। হাওলাদার নামের এক ক্রেতার সাথে কথা হয়। তিনি বড় ইলিশ দেখছিলেন। তিনি বলেন, দাম আরেকটু কমুক। তখন কেনা যাবে। মিরপুর সাড়ে ১১ মুসলিম বাজারে গিয়েও দেখা মিলল ছোট ইলিশের ক্রেতা বেশি। এক ক্রেতাকে ছয়-সাত পিস জাটকা কিনতে দেখা গেল। ৬০০ টাকা কেজিতে ছোট ইলিশ কিনেছেন বলে জানান তিনি।

মাসুদ নামের এক বিক্রেতা জানান, প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৪০০ টাকায়, আধা কেজি ওজনের ইলিশ এক হাজার ৩০০ টাকা ও ছোট ইলিশ (৩ পিসে ১ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। রাজধানীর আরো কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে দাম কিছুটা কম। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, চলতি বছর খুচরায় গত বছরের চেয়ে গড়ে ১৬ শতাংশ বেশি দামে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীতে এখন কেজি ৮০০ থেকে দুই হাজার টাকায় ইলিশ মিলছে, যেখানে গত বছর দাম ছিল ৮০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকা।