বৃষ্টি হলেই নির্ঘুম রাত কাটে ফজিলার

Printed Edition
২২ বছর যাবত ভাঙা ঘরে  বসবাস করছেন ৬০ বছর বয়সী ফজিলা বেগম : নয়া দিগন্ত
২২ বছর যাবত ভাঙা ঘরে বসবাস করছেন ৬০ বছর বয়সী ফজিলা বেগম : নয়া দিগন্ত

মুহাম্মদুল্লাহ সখীপুর (টাঙ্গাইল)

বৃষ্টি নামলেই ঘরের টিন ফুঁড়ে পানি ঝরে পড়ে বিছানায়। রাতভর ভিজে ভিজে নির্ঘুম ঘুমহীন সময়। কখনো দু’মুঠো ভাত মেলে, আবার কখনো না খেয়েই দিন পার করতে হয় তাকে। ৬০ বছর বয়সী ফজিলা বেগম জীবনের শেষ প্রহরে এসে যেন এক অসহায় সংগ্রামী নারীর প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের মৃত ওমর ফারুকের স্ত্রী ফজিলা বেগম। স্বামী মারা গেছেন প্রায় ১২ বছর আগে। তিন ছেলের মধ্যে বড় ও মেঝো ছেলে আগেই মারা গেছেন। ছোট ছেলে জুয়েল জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। তাই সংসারের ভার টেনে নিতে পারছেন না তিনি। নাতনী জান্নাতকে (১০) নিয়ে ভাঙা একটি টিনশেড ঘরেই মানবেতর দিনযাপন করছেন এই বৃদ্ধা।

ফজিলা বেগম জানান, স্বামীর রেখে যাওয়া এই টিনশেড ঘরে ২২ বছর ধরে বসবাস করছেন তিনি। মরিচা ধরা টিনের ফাঁকফোকর দিয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি। বৃষ্টি এলে ঘরের ভেতরটা ভিজে যায়; শোবার মতো জায়গাও থাকে না। খাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা নেই। মানুষ যা-ই দেয়, তা দিয়েই দিন চলে।

চার বছর আগে মারা যাওয়া মেঝো ছেলের রেখে যাওয়া নাতনী জান্নাতকে স্থানীয় একটি মাদরাসায় ভর্তি করে দিয়েছেন। মেয়েটিকে পছন্দের খাবার বা পোশাক কিছুই দিতে পারেন না তিনি। এ নিয়ে আক্ষেপের শেষ নেই তার।

সম্প্রতি গত ৩১ আগস্ট রাতে তার ঘর থেকে চাল ও মোবাইল ফোন চুরি হয়ে গেছে। মানুষের কাছে হাত পেতে কিছু টাকা দিয়ে চাল কিনেছিলেন তিনি। সেই সামান্য ভাতের ভরসাটুকুও নিয়ে গেছে চোরে।

স্থানীয়রা জানান, ফজিলা বেগম প্রকৃত অর্থেই অসহায়। সংসারে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। মাঝে মধ্যেই অনাহারে দিন কাটে তার। নতুন ঘর করার সামর্থ্যও নেই। সরকার বা কোনো সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যদি তার পাশে এসে দাঁড়ায়, তাহলে অন্তত শেষ বয়সে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে মরতে পারেন তিনি।

কালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মামুন সিকদার বলেন, ফজিলা বেগম ভাঙা ঘরে অমানবিক কষ্টে আছেন। ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।

এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ বলেন, তার বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। ঘর নির্মাণের বিষয়েও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলব।