পার্বতীপুর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা
পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। পার্বতীপুর উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের আট জেলা বিদ্যুৎহীন কিংবা লোভোল্টেজের কবলে পড়েছে। গত রোববার রাত সাড়ে ৮টায় যান্ত্রিক ত্রুটির মুখে পড়ে কেন্দ্রের অপর ১২৫ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট ও এর আগে গত ১৬ অক্টোবর সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে গর্ভনর ভালভ স্টিম সেন্সরের চারটি টারবাইন নষ্ট হওয়ার কারণে কেন্দ্রের ২৭৫ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিট এবং উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের সংস্কার করার জন্য ওভার হোলিং কাজ ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে প্রায় ৫ বছর ধরে কাজ চলছে।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো: আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ত্রুটির কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের বন্ধ হয়ে যাওয়া তৃতীয় ও দ্বিতীয় ইউনিট এক সপ্তাহের মধ্যে উৎপাদনে যেতে পারছে না। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সচলের চেষ্টা চলছে।
জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও উত্তরাঞ্চলে চাহিদা পূরণে পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, অন্য দিকে সরবরাহে ঘাটতি। মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের মানুষ। জাতীয় গ্রিড থেকেও মিলছে না চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ। জাতীয় গ্রিড থেকে কমিয়ে দেয়া হয় দিনাজপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে ত্রুটি দেখা দিলে প্রভাব পড়ে পার্বতীপুরে। বিশেষ করে পার্বতীপুর উপজেলার পল্লীবিদ্যুতের ৮০ হাজার গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে বেড়েছে ভ্যাপসা গরম। ৩২ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পুড়ছে। বন্ধ থাকায় কমে যাওয়ায় এ গরমে বেড়ে যায় লোডশেডিং। সকাল, ভোর কিংবা গভীর রাত- যখন তখন চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গ্রাহকদের ভুগতে হয় লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায়। প্রচণ্ড গরমে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর নয়াপড়া আবু সালেম বলেন, এক দিকে গরম, অন্য দিকে রাত দিন সমানতালে লোডশেডিং। অবস্থায় সুস্থ থাকাটাই কষ্টসাধ্য হয়ে এ পড়েছে।
এ ব্যাপারে দিনাজপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর পার্বতীপুর জোনাল কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জহুরুল হক জানান, বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় ভোগান্তি আরো বেড়েছে। ছুটির দিন ছাড়া তার জোনে প্রতিদিনের চাহিদা ১৮ মেগাওয়াট। কয়েক দিন থেকে চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি থাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এতে পল্লীবিদ্যুতের ৮০ হাজার গ্রাহকরা দুর্ভোগে পড়েছেন। চাহিদার বিপরীতে পাচ্ছি মাত্র ছয়-সাত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ ছাড়া বিদ্যুতের ভোল্টেজ স্থিতিশীল রাখাও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো: আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ত্রুটি সারানোর চেষ্টা চলছে।
উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৭৫ মেগাওয়াট তৃতীয় ইউনিট থেকে প্রতিদিন ১৪০-১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হতো। ৩ নং ইউনিটটি চালু রাখতে দৈনিক ১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন কয়লা লাগত। ১২৫ মেগাওয়াট ইউনিট থেকে প্রতিদিন ৪০-৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হতো। ১নং ইউনিটটি চালু রাখতে দৈনিক ৭০০ থেকে ৮০০ মেট্রিক টন কয়লা ব্যবহার হতো। ১২৫ মেগাওয়াট ২নং ইউনিট দিয়ে প্রতিদিন ৬০/৬৫ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো। এখানের কয়লা ব্যবহার হতো ৮০০ থেকে ৯০০ মে.টন। ২০২০ সাল থেকে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ২নং ইউনিটি সংস্কার করার জন্য ওভার হোলিংয়ে রয়েছে। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটির তিনটি ইউনিট চালু রেখে স্বাভাবিক উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন পড়ে। আজ পর্যন্ত তিনটি ইউনিট একই সাথে কখনই চালাতে পারেনি তাপবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সরবরাহকৃত কয়লার ওপর নির্ভর করে ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কোল ইয়ার্ডে কয়লা মজুদ রয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার মে. টন কয়লা। এ দিকে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) পার্বতীপুর কার্যালয় জানিয়েছে, পার্বতীপুর শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ৬ থেকে ৭ মেগাওয়াট। কিন্তু বরাদ্দ মিলছে ৩ থেকে ৪ মেগাওয়াট। শহরে নেসকোর আওতাধীন প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। নেসকোর পার্বতীপুর শহরে বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে সাত মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৩ মেগাওয়াট।
এ ব্যাপারে কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো: আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বর্তমানে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিট ও প্রথম ইউনিটটি মেরামত কাজ চলমান রয়েছে। কেন্দ্রের দু’টি ইউনিট চালু হলে এ অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা অনেকটা কমবে আসবে। আগামী এক সপ্তাহের পর কেন্দ্রের দু’টি ইউনিটি বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফিরবে।



