নিজস্ব প্রতিবেদক
রামপুরায় ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ আমির হোসেনকে গুলি করাসহ দু’জনকে হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনাল-১-এর ত্রি-মধ্যস্থ বিচারিক প্যানেলের সামনে গুলিবিদ্ধ আমির হোসেন স্যা দিয়েছেন। পরবর্তী স্যা গ্রহণের জন্য আগামী ২৭ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো: শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো: মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এ দিন প্রথমেই ঘটনার প্রোপট বর্ণনা করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। স্যা গ্রহণ শুরু হলে প্রথম সাী হিসেবে জবানবন্দী দেন গুলিবিদ্ধ সেই আমির হোসেন। পরে তাকে জেরা করেন পলাতক তিন আসামির পে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন ও গ্রেফতার চঞ্চল চন্দ্র সরকারের আইনজীবী সারওয়ার জাহান।
গত ১৬ অক্টোবর রামপুরার এ মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের দিন নির্ধারিত ছিল। তবে সে দিন প্রসিকিউশনের পে আরো এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হলে ২৩ অক্টোবর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-১।
এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারের পে শুনানি করেন আইনজীবী সারওয়ার জাহান। এ সময় অভিযোগ পড়ে শোনানো হলে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন আসামি চঞ্চল। শুনানি শেষে অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। গতকাল সকালে এ মামলায় রামপুরা পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। হাবিবুর ছাড়া বাকি তিন আসামি হলেন- খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি মো: রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো: মশিউর রহমান ও রামপুরা থানার সাবেক এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। গত ১০ আগস্ট তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে, ১ সেপ্টেম্বর পলাতক চার আসামির পে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। ২৫ আগস্ট পলাতক আসামিদের ট্রাইব্যুনালে হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেয়া হয়। গত ৭ আগস্ট প্রসিকিউশনের পে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) দাখিল করেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ। গত ৩১ জুলাই চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।
অভিযোগে প্রকাশ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ১৯ জুলাই বিকেলে রামপুরায় হোটেলে কাজ শেষে ঢাকায় থাকা ফুফুর বাসায় ফিরছিলেন আমির হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বনশ্রী-মেরাদিয়া সড়কের দুই পাশে পুলিশ-বিজিবির গাড়ি দেখে ভয়ে প্রাণ বাঁচাতে পাশে থাকা একটি নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের ছাদে ওঠেন তিনি।
ওই সময় পুলিশও তার পিছু পিছু যায়। একপর্যায়ে জীবন বাঁচাতে ওই নির্মাণাধীন ভবনটির ছাদের কার্নিশের রড ধরে ঝুলে থাকেন আমির; কিন্তু তাকে দেখে ফেলে পুলিশ। পরে তার উপর ছয়টি গুলি ছোড়ে এক পুলিশ সদস্য। এতে তিন তলায় পড়ে গেলে আশপাশের লোকজন উদ্ধার করে বনশ্রীর একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই দিন রাতেই তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা। সেখানে দীর্ঘ দিন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরেন ভুক্তভোগী এই তরুণ। এ ছাড়া একই দিন রামপুরার বনশ্রী এলাকায় পুলিশের গুলিতে নাদিম ও মায়া ইসলাম নিহত হন। একই সাথে মায়া ইসলামের ছয় বছর বয়সী নাতি বাসিত খান মুসা গুলিবিদ্ধ হয়। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিলে এখনো কথা বলতে পারছে না এই শিশু। গত ২৬ জানুয়ারি রাতে আমির হোসেনকে ল্য করে গুলি চালানো সাবেক এএসআই চঞ্চল সরকারকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে গ্রেফতার করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহার নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর পুলিশের একটি দল।



