গাজীপুরে মেলার নামে জুয়া-প্রতারণা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ, অবরোধ

Printed Edition

মোহাম্মদ আলী ঝিলন গাজীপুর থেকে

গাজীপুরের শিমুলতলীতে বাণিজ্য ও কুটির শিল্পমেলার নামে অবৈধ লটারি ও জুয়ার মেলা বন্ধের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন এলাকাবাসী। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা ঢাকা-শিমুলতলী সড়কে বাংলাদেশ মেশিন টুলস কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় তারা মেলায় প্রবেশমূল্যের র‌্যাফেল ড্র’র নামে জুয়া, লটারির নামে প্রতারণা, মেলার সামনের জনগনের ব্যবহারের একমাত্র সড়কটিতে যানজট সৃষ্টির মাধ্যমে ভোগান্তি সৃষ্টি, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার বিঘœ ঘটানোসহ বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টির অভিযোগ জানিয়ে প্রতিবাদ করে। সমাবেশে বক্তারা মেলায় সব অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধের আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, আমরা এলাকাবাসী অনেক ধৈর্য ধরেছি। আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে এর দায় কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।

জামিয়া ইসলামিয়া গাজীপুর মাদাসার মুহতামিম মুফতি হাবিবুর রহমান মিয়াজীর সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- মহানগর ইমাম সমিতির সেক্রেটারি গাজী আবু বকর সিদ্দিক, সমাবেশের আহ্বায়ক ইসলামিক অ্যাক্টিভিস্ট আহমদে সাদিকুর রহমন রুবেল, ছাত্রনেতা পিকু, ডুয়েট ছাত্র প্রতিনিধি মোহাম্মদ যুবায়ের, স্থানীয় সমাজসেবক রফিকুল ইসলাম আলম, ডুয়েট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুল্লাহ মাসুম, আলবীর জামে মসজিদের ইমাম মুফতি শামসুল ইসলাম, মুফতি নূরুদ্দীন রাহমানী, মুফতি হুসাইন আহমাদ কাসেমী, মুফতি সালাউদ্দিন নয়নপুরী, মাওলানা আজহার আলী , মুফতি রাকিবুল ইসলাম প্রমুখ।

স্থানীয়রা বলেন, একটি মেলা অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে না। এর আগেও গত বছর এ ধরনের মেলা আয়োজন করে প্রায় দু’মাস চালিয়েছে। কুটির শিল্প মেলার নামে লটারির প্রতারণা ও জুয়ার মেলা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের অনুমোদনহীন অবৈধ এ মেলার কারণে স্থানীয় কয়েক লাখ বাসিন্দার দুর্ভোগের শেষ নেই। বার্ষিক পরীক্ষা সামনে রেখে মেলার পাশের এলাকায় বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘœসহ প্রচণ্ড যানজটে অতিষ্ঠ স্থানীয়রা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বাণিজ্য ও কুটির শিল্পমেলা নাম দেয়া হলেও এটির মূল উদ্দেশ্য লটারি। প্রতিদিন শত শত অটোরিকশা দিয়ে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় লাখ লাখ লটারি বিক্রি করা হচ্ছে। র‌্যাফল ড্রয়ের নামে মোটরসাইকেল, স্বর্ণ, ল্যাপটপ, টিভি, ফ্রিজ ও ডিনারসেটসহ নানা রকম পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে বিক্রি হচ্ছে বিপুলসংখ্যক টিকিট। আর এসব টিকিট বিক্রির জন্য টার্গেট করা হয়েছে সাধারণ মানুষ। রিকশাচালক ও দিনমজুর শ্রেণীর লোকজন অনেকে র‌্যাফল ড্রয়ে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। লটারি যারা পাচ্ছেন তারা মেলা কর্তৃপক্ষের সাজানো লোকজন। কারসাজির মাধ্যমে লটারির বেশির ভাগ পুরস্কারই নিজেদের মধ্যেই রেখে দিচ্ছে। এতে নিম্নআয়ের মানুষ ভাগ্য ফেরানোর আশায় কুপন কিনলেও খালি হাতে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছে তাদের।

এ দিকে মেলাকে কেন্দ্র করে জয়দেবপুর থেকে শিমুলতলী চলাচলকারী সড়কে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত স্থায়ী যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে অফিসফেরত যাত্রীরা যেমন দুর্ভোগে পরে তেমনি দূর-দূরান্তের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকা পড়। উচ্চ আওয়াজে মাইক বাজানোর কারণে মেলাসংলগ্ন শেলটেক হাউজিংসহ আশপাশের এলাকার শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘœ ঘটে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, মেলাকে কেন্দ্র করে নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা দোকানের বাকি পরিশোধ না করে টিকিট কেনে। অনেকে বাড়ি ভাড়ার টাকা পরিশোধ না করে সব টাকা দিয়ে টিকিট কিনে প্রতারিত হয়। এতে সামাজিক ও পারিবারিক নানা অঘটন ঘটে।

জানা গেছে, গত ২৭ আগস্ট বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির পক্ষে একটি অবহিতকরণ চিঠি বিতরণ করা হয়। চিঠির বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএমটিএফ লিমিটেড আর্মি ফার্মা ফ্যাক্টরির নির্ধারিত ফাঁকা স্থানে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমেলার আয়োজন প্রসঙ্গে। বেনারসি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের স্বত্বাধিকারী বাদল মিয়া ‘ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প’মেলার আয়োজন করে।

এ মেলার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ডুয়েট শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গত ২১ সেপ্টেম্বর গাজীপুর জেলা প্রশাসক বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়। স্মারকলিপিতে আর্মি ফার্মা মাঠে অনুষ্ঠিত মেলায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি প্রসঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়। আবেদনে কয়েকটি সমস্যার কথা তুলে ধরে চার দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়।

গাজীপুর প্রশাসনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মেলা পরিপত্র অনুযায়ী জেলা ও মহানগর এলাকায় এক মাসের জন্য মেলার অনুমতি দিতে পারেন জেলা প্রশাসক। কিন্তু এ মেলা আয়োজনের জন্য অনুমতির চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর কোনো আবেদনই করেনি কর্তৃপক্ষ। তারা একটি অবহিতকরণ চিঠি দিয়েছে। চিঠি পাওয়ার পর অননুমোদিত মেলা বন্ধ করার জন্য আমরা মহানগর পুলিশকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। ওই মেলার বিষয়ে পাশের ডুয়েটের শিক্ষার্থীরাও আপত্তি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে মেলা আয়োজকদের একজন মো: মাহমুদ দাবি করেন, আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি।

তবে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালমা খাতুন বলেন, জেলা প্রশাসকের কাছে কেউ কোনো আবেদন করেনি, তাই মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয়ার প্রশ্ন অবান্তর। গাজীপুর সদর থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, মেলার অনুমতির জন্য আমাদের কাছে কেউ আবেদন করেনি- আমরা কোনো অনুমতি দেইনি।