যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা চায় ইরান

আলজাজিরা
Printed Edition

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি নতুন চুক্তিতে পৌঁছাতে হলে, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই সুনির্দিষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে কিভাবে নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করা হবে। সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাগায়ি এ মন্তব্য করেন। কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘গ্রহণযোগ্য’ প্রস্তাব জমা দেয়ার দাবি করার পর- এমন মন্তব্য করলেন তিনি। তবে বেশ কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মনে করছে এবং তা প্রত্যাখ্যানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

দুই পক্ষই পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সাত সপ্তাহ ধরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত হতে চাইছে যে ইরানের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। আর ইরান অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেতে চাইছে। তবে এখন তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করছে, যে তারা কী দিচ্ছে, বিশেষ করে বছরের শুরুতে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনী যে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, তারই প্রতিফলন এটি।

সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনাতে প্রকাশিত এক বক্তব্যে বাগায়ি বলেন, নিষেধাজ্ঞার ‘বাস্তব সমাপ্তি’ নিশ্চিত করতে হবে এবং বিস্তারিত জানাতে হবে ‘কিভাবে ও কোন ব্যবস্থার মাধ্যমে’ সেগুলো তুলে নেয়া হবে। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমেরিকান পক্ষ এখনো প্রয়োজনীয় স্পষ্টতা প্রদান করেনি।’ বাঘায়ি আরো বলেন, ইরান শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখবে।

মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চান না ইরান কোনো ধরনের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাক, এটিকে তিনি ‘রেড লাইন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। জাতিসঙ্ঘের একটি ফাঁস হওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়িয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় ৯০ শতাংশের নিচে হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় ৪ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি।

ওই রিপোর্টকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে উড়িয়ে দেন বাগায়ি। তিনি বলেন, কিছু পশ্চিমা দেশ জাতিসঙ্ঘের ওপর চাপ দিচ্ছে যাতে তারা ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস উদ্ধৃত সরকারি সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক মার্কিন প্রস্তাবে ইরানের সব ধরনের সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। যদিও তেহরান হোয়াইট হাউজের ‘ইরানের স্বার্থ উপযোগী’ বলা ওই প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

তবে তারা বলেছে এখনো বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বাগায়ি বলেন, ‘কোনো একটি লেখা পাওয়া মানে এটি গ্রহণ করা নয়। এমনকি এটি গ্রহণযোগ্য বলেও ধরে নেয়া যায় না।’ রয়টার্স একটি অজ্ঞাতনামা ইরানি কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, তেহরান ‘মার্কিন প্রস্তাবের প্রতি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া খসড়া করছে’, যা প্রত্যাখ্যান হিসেবেও গণ্য হতে পারে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবটি ‘অগ্রহণযোগ্য’। কারণ এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান নরম করেনি এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো ‘সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা’ দেয়নি। ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পূর্বের চুক্তি থেকে সরে আসার পর থেকে ইরান ১২ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি নতুন চুক্তির লক্ষ্যে পাঁচ দফা আলোচনা করেছে।