নিজস্ব প্রতিবেদক
নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে সুকুক বা ইসলামী বন্ডের মাধ্যমে আড়াই হাজার কোটি টাকা তুলতে যাচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে এই সুকুক ইস্যুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রে জানা গেছে, ‘আইআরআইডিপিএনএফএল সোসিও-ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট সুকুক’ নামে সাত বছর মেয়াদি এই বন্ডটি ইজারা পদ্ধতিতে ইস্যু করা হবে। ডিসেম্বর ২০২৫ সালের মধ্যেই সুকুকটি বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
২০ উপজেলায় সড়ক ও হাটবাজার উন্নয়ন
এই সুকুক থেকে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে নোয়াখালী, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার ২০টি উপজেলার সড়ক উন্নয়ন, প্রশস্তকরণ, পুনর্বাসন, ঢাল রক্ষাকরণ, হাটবাজার ও পর্যটন এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এই বন্ডে ব্যাংক, বিমা, করপোরেট প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরাও অংশ নিতে পারবেন। লক্ষ্য ডিসেম্বরের মধ্যেই ইস্যু সম্পন্ন করা।’
সরকার আশা করছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এলাকার কৃষি ও অকৃষি অর্থনীতি সক্রিয় হবে, পরিবহন ব্যয় ও সময় কমবে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
উন্নয়নের বিকল্প উৎস
বাংলাদেশ ব্যাংকের শরিয়াহ অ্যাডভাইজরি কমিটির সভাপতি ও ডেপুটি গভর্নর কবির আহাম্মদ সভায় বলেন, ‘সুকুক এখন সরকারের উন্নয়ন অর্থায়নের একটি টেকসই বিকল্প উৎস হিসেবে কাজ করছে। আঞ্চলিক বৈষম্য কমাতেও এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’
এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক স্পেশাল পারপাস ভেহিকেলের মাধ্যমে ২৪ হাজার কোটি টাকার ছয়টি সরকারি সুকুক ইস্যু করেছে। নতুন এই সুকুকটি হবে সরকারের সপ্তম ইস্যু।
অর্থনীতিবিদদের মতে, শরিয়াহসম্মত বন্ড হিসেবে সুকুক একটি উদ্ভাবনী উদ্যোগ হলেও এর কার্যকারিতা নির্ভর করবে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও স্বচ্ছতার ওপর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সুকুক তখনই প্রকৃত অর্থে সফল হবে, যখন প্রকল্প বাস্তবায়ন স্থানীয় চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে এবং সামাজিক বিনিয়োগের রিটার্ন (ঝজঙও) নির্ভর মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে।’
বাংলাদেশে প্রথম সরকারি সুকুক ইস্যু হয় ২০২০ সালে। এরপর বিদ্যুৎ, শিক্ষা, সড়ক ও প্রশাসনিক অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে ছয়টি সুকুকের মাধ্যমে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
নোয়াখালী-ফেনী-লক্ষ্মীপুরের জন্য নতুন এই সুকুক হবে দেশের প্রথম আঞ্চলিক উন্নয়ননির্ভর বন্ড।
সরকার বলছে, এই প্রকল্প দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে নতুন গতি আনবে। তবে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করছেন-যদি প্রকল্প বাস্তবায়নে জবাবদিহি ও আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত না হয়, তবে এই সুকুকও ‘নতুন ঋণের বোঝা’ হিসেবেই থেকে যেতে পারে।



