মসজিদ-কবরস্থান রক্ষায় চট্টগ্রামে সিআরবি ঘেরাও রেল শ্রমিকদের

Printed Edition

চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রামের হালিশহর সিজিপিওয়াই এলাকার রেলওয়ের কবরস্থান, মসজিদ ও আপৎকালীন জলাশয় দখল করে ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণের প্রতিবাদে এবং লিজ চুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত রেলকর্মীরা গতকাল সিআরবি এলাকায় রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) অফিস ঘেরাও করেন।

বেলা ১১টার দিকে কয়েক শত রেলকর্মী, তাদের পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা মিছিলসহ সিআরবিতে পৌঁছলে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশ তাদের রেল ভবনে প্রবেশে বাধা দেয়। পরে বিক্ষুব্ধ কর্মীরা বাধা উপেক্ষা করে রেল ভবনে প্রবেশ করে ‘লিজ বাতিল করো’, ‘কবরস্থান-মসজিদ বাঁচাও’-এমন স্লোগান দেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মীরা রেলের জিএম সুবক্তগীনের অফিসের মূল ফটক বন্ধ করে দেয়। পরে বাইরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন রেলকর্মীরা।

তারা অভিযোগ করেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বেসরকারি কোম্পানির সাথে চুক্তি করতে গিয়ে শতবর্ষী কবরস্থান, ধর্মীয় স্থাপনা ও জলাশয়ের জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে জালিয়াতি করেছে। সেখানে প্রায় ৪৫০টি কবর রয়েছে। সব জেনেও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে লিজ দেয়া হয়েছে। তারা বলেন, রেলওয়ের ইতিহাসে কখনো ধর্মীয় স্থাপনা ও কবরস্থান দখল করে প্রকল্প নেয়া হয়নি।

শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করেন, আন্দোলনের মধ্যেই কৌশলে মসজিদ ও কবরস্থান উচ্ছেদের চক্রান্ত চলছে। রেল সচিব ও উপদেষ্টার মৌখিক নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এখনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণের লিখিত আদেশ আসেনি- যা প্রতারণার শামিল। যৌক্তিক দাবি আদায় না হলে সারা দেশে রেল ধর্মঘটের ডাক দেয়া হবে। তবুও কবরস্থান-মসজিদ বিক্রি করতে দেয়া হবে না।

এ দিকে দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারীদের সাথে আলোচনার আহ্বান জানান রেলের মহাব্যবস্থাপক মো: সুবক্তগীন। রেলওয়ে রানিং স্টাফ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো: মজিবুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল জি এম অফিসের দ্বিতীয়তলায় প্রায় আধা ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।

বৈঠক শেষে নিচে নেমে জি এম সুবক্তগীন বলেন, বিষয়টি আমরা অবগত আছি। রেলের মহাপরিচালক ও সচিবসহ সবাই বিষয়টি জানেন এবং পরিদর্শনও করেছেন। আপনাদের স্বার্থ অক্ষুণœ থাকবে-কবরস্থান, মসজিদ ও মাজার থাকবে। আজ বুধবার গঠিত কমিটি গিয়ে স্থানগুলো ডিমার্কেশন করবে। এমন আশ্বাসের পর বেলা ১টার দিকে আন্দোলন স্থগিত করে শ্রমিকরা স্থান ত্যাগ করেন।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- জাতীয়তাবাদী রেল শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক এম আর মঞ্জু, রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো: মজিবুর রহমান, রেলওয়ে কারিগরি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এস কে বাড়ি, সিজিপিওয়াই সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হোসেন শহীদ, সদস্যসচিব মো: জাহাঙ্গীর আলম এবং রেলওয়ে এমপ্লয়িজ লীগের দফতর সম্পাদক মো: আসাদুজ্জামান শিশির। রেলের চুক্তি অনুযায়ী, হালিশহর এলাকায় ২১ দশমিক ২৯ একর জমি কনটেইনার টার্মিনালের জন্য সিসিবিএলকে বাণিজ্যিকভাবে লিজ দেয়া হয়। পরে সিসিবিএল চুক্তি করে বেসরকারি সাইফ পাওয়ারটেকের সাথে। রেলওয়ে কর্মীদের অভিযোগ, প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন এলাকায় রেলের বিপুল পরিমাণ খালি জমি থাকলেও কবরস্থান ও মসজিদের সংলগ্ন জমিতেই আইসিডি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।