নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কিত সুপারিশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সাথে ভার্চুয়ালি সভা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদের কমিশন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে এ ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরিফ ভূইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন।
সভায় সনদ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন সুপারিশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়, যেখানে সাংবিধানিক ও আইনি দিকগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে প্রাপ্ত মতামতও পর্যালোচনা করা হয়।
আলোচনায় কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো: এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য গঠনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও এ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাথে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত শনিবার আবারো আলোচনা করেছেন। বাস্তবায়ন ঘোষণা চূড়ান্ত করা নিয়ে গতকাল সকাল ১০টায় বৈঠকে মিলিত হন ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা। সেখান থেকে কমিশন বিশেষজ্ঞদের সাথে ভার্চুয়ালি আলোচনা করেন। শেষ দফা আলোচনার পর এনসিপিকে জুলাই সনদে স্বাক্ষরের ব্যাপারে ইতিবাচক মনে হলেও দলের নেতারা নিশ্চিত করে বলেননি যে তারা সনদে স্বাক্ষর করবেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্মসদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, জুলাই সনদ হচ্ছে বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতিকে নতুন গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে পুনর্গঠনের একটি সুযোগ। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর এ সনদের মাধ্যমে জনগণের ক্ষমতা এবং ভবিষ্যতে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটানো সম্ভব। তবে সনদটির আইনি ভিত্তি ও কিছু জনদাবির বিষয়ে উল্লেখ না থাকায় এটি এখনো কাগজেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে আমরা মনে করি।
তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই বিপ্লব যারা করেছে তাদের ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী ৬ নম্বর আর্টিকেল ভঙ্গের দায়ে যেকোনো শাস্তি দেয়া যাবে। জুলাই অভ্যুত্থানের আইনি ভিত্তি না থাকলে ভবিষ্যতে বিপ্লবীদের গলায় ফাঁসির দড়ি উঠতে পারে। এর আগে ওই সনদের ব্যাপারে দলীয়ভাবে আমরা কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছি। জুলাই বিপ্লবীদের সুরক্ষার জন্যও অবশ্যই একটি স্পষ্ট আইনি ভিত্তি ও সাংবিধানিক ভিত্তি দিতে হবে।
তিনি বলেন, জুলাই সনদে স্বাক্ষরের আগে এর আইনি ভিত্তির খসড়া প্রস্তাবনায় কয়েকটি বিষয় নিশ্চিতভাবে থাকতে হবে- প্রথমত. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগেই প্রকাশ করতে হবে এবং তা ‘জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়’ অনুসারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের পক্ষ থেকে জারি হতে হবে, যার বৈধতার উৎস হবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান; দ্বিতীয়ত, জুলাই সনদের ৮৪টি সংস্কার বিষয়ের ওপর গণভোট আয়োজনের নিশ্চয়তা থাকতে হবে, যেখানে ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর কোনো আলাদা কার্যকারিতা থাকবে না এবং গণভোটের প্রশ্নগুলো আগেই চূড়ান্ত করে রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখাতে হবে; তৃতীয়ত. গণভোটে যদি জনগণ জুলাই সনদের পক্ষে রায় দেয়, তবে সেই রায় অনুযায়ী আগামী নির্বাচিত সংসদ সংবিধান সংস্কার করে নতুন সংবিধান ‘বাংলাদেশ সংবিধান, ২০২৬’ নামে প্রণয়ন করবে। এসব আইনি নিশ্চয়তা ছাড়া জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা জনগণের সাথে ছলচাতুরী হবে, তাই এ বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকলেই আমরা সনদে স্বাক্ষর করব।



