অর্থ বিভাগের পরিপত্র জারি

ব্যয়সঙ্কোচন ও অগ্রাধিকার নির্ধারণে নতুন নির্দেশনা

নতুন মোটরযান জলযান ও আকাশযান ক্রয়ে বরাদ্দ ব্যয় বন্ধ

Printed Edition

বিশেষ সংবাদদাতা

সরকারের সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার ও ব্যয়সঙ্কোচন নিশ্চিত করতে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রণয়নের জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। গত রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে জারি করা ‘বাজেট পরিপত্রে’ বলা হয়েছে, কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগই মূল বাজেটের সীমা অতিক্রম করে অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করতে পারবে না।

পর্যবেক্ষকদের ধারণা- ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এই সংশোধিত বাজেট প্রণয়ন নীতিমালা সরকারের বর্তমান সংযম, স্বচ্ছতা ও ফলাফলভিত্তিক ব্যয় ব্যবস্থাপনার প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। তবে বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক সমন্বয় ও রাজস্ব প্রবাহের সক্ষমতা- এই তিনটি বিষয় নির্ধারণ করবে, কৃচ্ছ্র সাধনের এই নির্দেশনা কতটা কার্যকর হয়।

মূল লক্ষ্য- অগ্রাধিকার খাতে সম্পদের কার্যকর ব্যবহার : পরিপত্রে বলা হয়েছে, সংশোধিত বাজেট প্রণয়ন হবে ‘মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো পদ্ধতির আওতায় সরকারের অগ্রাধিকার খাতগুলোতে সম্পদের দক্ষ বণ্টন’-এর ভিত্তিতে। অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে সীমিত তহবিলের মধ্যে কার্যক্রম পুনর্বিন্যাস করতে হবে।

অর্থ বিভাগ বলছে, চলতি অর্থবছরের উন্নয়ন ও পরিচালন বাজেটে প্রদর্শিত মোট ব্যয়সীমার মধ্যে থেকেই প্রয়োজনীয় পুনর্বিন্যাস করতে হবে। কোনো খাতে বরাদ্দ অব্যয়িত থাকলে তা অন্য খাতে, বিশেষ করে পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।

কৃচ্ছ্র সাধনের ওপর কঠোর নির্দেশনা : পরিপত্রে চলতি অর্থবছরে সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্র সাধনের নীতি আরো কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। ২০২২ সালের ব্যয়সঙ্কোচন সংক্রান্ত পরিপত্রের ধারাবাহিকতায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে অনেকগুলো নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রথমত- যানবাহন ক্রয়ে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা। এর আওতায় নতুন মোটরযান, জলযান ও আকাশযান ক্রয়ে বরাদ্দ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের অধিক পুরনো টিওএন্ডইভুক্ত যানবাহন প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় করা যাবে।

দ্বিতীয়ত- নতুন ভবন নির্মাণে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের স্থাপনা ছাড়া অন্য কোনো আবাসিক বা অনাবাসিক ভবন নির্মাণে নতুন ব্যয় করা যাবে না; শুধুমাত্র ইতোমধ্যে অনুমোদিত ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ রাখা যাবে।

তৃতীয়ত- অবকাঠামো ব্যয়ের পুনর্মূল্যায়ন করে যেসব উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ অব্যয়িত থাকার আশঙ্কা রয়েছে, সেসব প্রকল্প থেকে অর্থ ফেরত নিয়ে অগ্রাধিকার খাতে স্থানান্তরের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

চতুর্থত- মন্ত্রণালয় ও সংস্থাগুলোর জন্য করণীয় হিসাবে প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদফতরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা যেন নিজ নিজ খাতের বরাদ্দ পুনর্বিন্যাসের সময় নীতি ও উদ্দেশ্য অর্জনের অগ্রাধিকার অনুযায়ী ব্যয়ের তালিকা তৈরি করে। অগ্রাধিকারবিহীন ও অনাবশ্যক ব্যয় যেমন- অফিস সাজসজ্জা, নতুন ফার্নিচার ক্রয়, বিদেশ ভ্রমণ ও প্রশিক্ষণ এড়িয়ে যেতে হবে।

অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, সংশোধিত বাজেট প্রণয়নে এই নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা না হলে ভবিষ্যতে বরাদ্দ অনুমোদন বা ছাড়পত্র প্রদানে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষার সঙ্কল্প : অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পরিপত্র সরকারের রাজস্ব ঘাটতি ও বৈদেশিক ঋণনির্ভরতা কমানোর প্রচেষ্টার অংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যপূরণ না হওয়া এবং প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় অর্থ বিভাগ ব্যয়সঙ্কোচনের ওপর জোর দিয়েছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. শামসুল আলম বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই পদক্ষেপ মূলত আর্থিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার একটি চেষ্টা। এটি প্রয়োগে দৃঢ়তা থাকলে উন্নয়ন ব্যয়ে স্বচ্ছতা বাড়বে এবং অগ্রাধিকার খাতগুলো প্রকৃত অর্থে উপকৃত হবে।’