মো: মিজানুর রহমান চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ)
পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ চুনারুঘাটের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। সবুজ পাহাড়, চা-বাগান, গহিন অরণ্য, দুর্লভ জীববৈচিত্র্য ও বিল-হাওরের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা প্রকৃতির অনন্য লীলা নিকেতন এটি। প্রতিদিনই এখানে ভিড় জমে দেশি-বিদেশি পর্যটকের। তবে পরিকল্পনার অভাব, নিরাপত্তাহীনতা ও অব্যবস্থাপনায় এ সম্ভাবনাময় খাত এখনো কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
চুনারুঘাট উপজেলায় রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেমা-কালেঙ্গা অভয়ারণ্য ও জনপ্রিয় সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। বনাঞ্চলে শতাধিক প্রজাতির প্রাণী ও পাখির বসবাস। উদ্যানে ১৯৭ প্রজাতির জীবজন্তু, প্রায় ২০০ প্রজাতির পাখি ও বহু বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী রয়েছে। এখানে বসবাস করছে পাহাড়ি টিপরা জনগোষ্ঠীর ২৪টি পরিবার, পাশাপাশি রয়েছে নয়টি চা-বাগান। অথচ পর্যটকদের জন্য কোনো হোটেল বা রিসোর্টে রাতযাপনের ব্যবস্থা নেই। দূরদূরান্ত থেকে আসা ভ্রমণপিপাসুদের থাকতে হয় হবিগঞ্জ বা সিলেট শহরে।
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, চুনারুঘাটকে পরিকল্পিতভাবে সাজানো গেলে দেশী-বিদেশী পর্যটক বাড়বে, বছরে কোটি টাকার ব্যবসা হবে এবং হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু সরকারি উদ্যোগ না থাকায় বেসরকারি বিনিয়োগকারীরাও পিছিয়ে আছেন।
টিপরা সম্প্রদায়ের নেতা লালমণি দেববর্মা বলেন, বিদেশী পর্যটকরা প্রায়ই আমাদের গ্রামে আসতে চান। কিন্তু থাকার জায়গা না থাকায় দ্রুত চলে যান। কমিউনিটি-ভিত্তিক পর্যটনের সুযোগ থাকলেও সরকারি সহযোগিতা ছাড়া তা সম্ভব নয়।
পরিবেশকর্মী সেলিমা আক্তার মনে করেন, রেমা-কালেঙ্গা ও সাতছড়ি শুধু পর্যটনের জন্য নয়, জীববৈচিত্র সংরক্ষণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। পর্যটন উন্নয়ন করতে হলে পরিবেশ রক্ষার সমন্বয় অপরিহার্য।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, চুনারুঘাটে অন্তত ১০-১২টি হোটেল-রিসোর্ট চলে। এতে বছরে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারতো। তরুণদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতো। তবে সরকারি পরিকল্পনা ছাড়া কেউ ঝুঁকি নিতে চায় না।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক রাশেদুল ইসলাম বলেন, সাতছড়ির সৌন্দর্য মন ভরিয়ে দেয়। কিন্তু রাত কাটানোর ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের হবিগঞ্জে ফিরতে হচ্ছে। এভাবে পর্যটক ধরে রাখা সম্ভব নয়। স্থানীয় কৃষক সিরাজ মিয়া বলেন, বন আর পাহাড় এখানকার অহঙ্কার। কিন্তু বনদস্যু আর বালু-মাটিখেকোরা প্রকৃতি ধ্বংস করছে।
চুনারুঘাট থানার ওসি আল-আমিন মীর বলেন, এলাকায় প্রতিদিনই দেশী-বিদেশী পর্যটক আসেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের দায়িত্ব। এজন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি পর্যটন পুলিশেরও নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে।
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সরকারি উদ্যোগ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ একসাথে হলে চুনারুঘাটকে দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। হবিগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা, পরিকল্পিত উদ্যোগের মাধ্যমে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও আশপাশের সবুজ পাহাড়ি অঞ্চল দেশের পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে।



