২৮ অক্টোবরের শহীদদের পরিবারের সাথে মতবিনিময়

যারা জনগণের ভোটে বিশ্বাসী নয় তারাই গণভোটকে ভয় পায় : মুজিবুর রহমান

Printed Edition
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান : নয়া দিগন্ত
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক মুজিবুর রহমান : নয়া দিগন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, যারা জনগণের ভোটে বিশ্বাসী নয় তারাই গণভোটকে ভয় পায়। এ জন্য তারা গণভোট আয়োজনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতার পরিবর্তে সংবিধানের দোহাই দিয়ে ভুল পথ দেখাচ্ছে। পিআর পদ্ধতিতে জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করে জুলাই সনদে প্রস্তাব করার দাবি জানিয়ে বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে নব্য ফ্যাসিবাদের পরিণতি আওয়ামী লীগের মতোই হবে। তিনি বলেন, বিগত ৫৪ বছর যেই পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়েছে সেই পদ্ধতিতে জাতি আর নির্বাচন চায় না। কারণ সেই পদ্ধতিতে জনগণের সরকার গঠিত হয়নি, হবেও না। নির্বাচনের বিদ্যমান পদ্ধতি হচ্ছে সরকারকে স্বৈরাচার হিসেবে তৈরি করার পদ্ধতি। একদলীয় শাসনব্যবস্থায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি, হবেও না। সব দলের প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ গঠিত হলে একক কোনো দল স্বৈরাচার হতে পারবে না। একদলীয় শাসনের পরিবর্তে বহুদলীয় সংসদ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবে। তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পিআর পদ্ধতির বিকল্প নেই।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরে আওয়ামী লীগের লগি-বৈঠা তাণ্ডবে শহীদদের পরিবারের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের উত্থান। আওয়ামী লীগ সে দিন সারা দেশে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে। জামায়াত-শিবিরের ১৪ জনকে তারা হত্যা করে লাশের উপর নৃত্য করেছে। যেটি মানব সভ্যতার এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। ওই ঘটনার মামলা হলেও শহীদ পরিবার ন্যায় বিচার পায়নি। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় বসেই সেই মামলা গায়েব করে দিয়েছিল। অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পরিচালিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।

সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো: নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের টার্গেট ছিল জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে সে দিনই হত্যা করা। এ জন্য তারা সে দিন সারা দেশ রক্তাক্ত করে। ওই ঘটনায় তখন মামলা করা হলেও পরবর্তী সময়ে অধিকতর তদন্তের নামে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করে রাখা হয়। তারপর হাসিনা ক্ষমতায় এসে বেআইনিভাবে মামলাটি বাতিল করে। তিনি ওই মামলা পুনরুজ্জীবিত করে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় মহানগরীর হলরুমে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় শহীদ সাইফুল্লাহ মুহাম্মদ মাসুমের মা শামসুর নাহার রুবি, শহীদ হাফেজ গোলাম কিবরিয়া শিপনের বাবা তাজুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারা বলেন, দ্বীন কায়েমের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য প্রয়োজন সাহসী মা। মা-বাবার অনুপ্রেরণায় সন্তানরা ইসলামের জন্য, দেশের জন্য জীবন দিতে দ্বিধাবোধ করবে না। তারা বলেন, আমাদের সন্তানদের আমরা দ্বীন কায়েমের জন্য আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করলাম। তাদের আত্মদানের পথ ধরেই চব্বিশের বিপ্লব। বাংলাদেশে হাসিনার ফ্যাসিজমের সূচনা হয় ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষকে সাপের মতো পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যার মাধ্যমে। তারা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের পরিচালিত সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে হাসিনাসহ তার দোসরদের ফাঁসির দাবি জানান।

সভাপতির বক্তব্যে মো: নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর লগি- বৈঠা দিয়ে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করার প্রকাশ্য নির্দেশ দিয়ে হাসিনা পৃথিবীর ইতিহাসে নিকৃষ্টতম নেতৃত্বের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। হাসিনার নির্দেশে ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যার পর তারা লাশের উপর নৃত্য করেছে। এতকিছুর পরও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে; কিন্তু রাজপথ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। কারণ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী। তিনি ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা পুনরুজ্জীবিত করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, শাপলা চত্বরের গণহত্যার শহীদ পরিবারের মতোই ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের গণহত্যার শিকার শহীদ পরিবারকে এবং আহত-পঙ্গুত্ববরণকারীদের আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসন করতে হবে।

২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ড ছিল দেশ ও জাতিসত্তাবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ : মাওলানা এ টি এম মা’ছুম

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টন হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে দেশের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ধসের পথ উন্মুক্ত করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মা’ছুম।

গতকাল রাজধানীর মগবাজারস্থ আল ফালাহ মিলনায়তনে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার নির্মম আঘাতে শাহাদতবরণকারীদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা: ফখরুদ্দীন মানিক।

ঢাকা সফররত জার্মানির সংসদীয় রাষ্ট্রসচিবের সাথে মিয়া গোলাম পরওয়ারের সৌজন্য সাক্ষাৎ : ফেডারেল রিপাবলিক অব জার্মানের পার্লামেন্টারিয়ান স্টেট সেক্রেটারি এবং পারস্পরিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী জোহান সাথফের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে ঢাকাস্থ জার্মান দূতাবাস এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, কূটনীতিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং সিভিল সোসাইটির গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. রুডিগার লটস ও ইভানা লটসের আমন্ত্রণে গতকাল সন্ধ্যায় জার্মান দূতাবাসে আয়োজিত এ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার অংশগ্রহণ করেন। সাক্ষাৎকালে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জার্মান সরকারের দীর্ঘস্থায়িত্ব, জার্মান সরকার ও জনগণের অব্যাহত সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। একইসাথে বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি সফল করার আহ্বান : ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগিবৈঠা দিয়ে হত্যার নৃশংস ঘটনার প্রতিবাদে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির আলোকে আজ দেশের সকল মহানগরী, জেলা, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল এবং সকল পর্যায়ে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে সর্বাত্মকভাবে সফল করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সকল শাখা সংগঠন ও দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।

বিয়ারিং প্যাড খুলে যুবক নিহত হওয়ার ঘটনায় শোক : রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে আবুল কালাম নামে এক যুবক নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। এই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ ও নিহতের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ার আহ্বান জানান তিনি।