নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ. মানসুর গতকাল রাজধানীতে জানিয়েছেন, দেশীয় ব্যাংকিং খাতে যোগ্য ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) এবং বিভাগীয় প্রধান পাওয়া ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। তিনি বলেন, যথাযথ জ্ঞানসম্পন্ন ও প্রশিক্ষিত এমডি পাওয়া খুবই কঠিন, যা ব্যাংকিং খাতের একটি বড় ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত।
গভর্নর এই মন্তব্য করেন ফাইন্যান্সিয়াল এক্সেলেন্স লিমিটেডের ১৫তম বার্ষিকী অনুষ্ঠানে, যা রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
সঙ্কটের গভীরতা : গভর্নর উল্লেখ করেন, করপোরেট বিভাগ হোক বা কনজিউমার বিভাগ, দক্ষ বিভাগীয় প্রধান খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ভবিষ্যতে ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ আরও কঠিন হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ সঙ্কটের মূল কারণ হলো অভিজ্ঞ মানবসম্পদ উন্নয়নের ঘাটতি, আধুনিক প্রশিক্ষণের অভাব এবং দ্রুত পরিবর্তনশীল ব্যাংকিং পরিবেশে অভিযোজনের অক্ষমতা। পাশাপাশি, তরুণ ও দক্ষ ব্যাংকারদের জন্য আকর্ষণীয় কর্মপরিবেশ ও উন্নয়ন সুযোগ সীমিত হওয়াও সমস্যার একটি বড় কারণ।
সম্ভাব্য সমাধান : বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ সঙ্কট মোকাবেলায় প্রয়োজন : ব্যাংকিং খাতে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ ও লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম সম্প্রসারণ। অভিজ্ঞ এমডি ও বিভাগীয় প্রধানদের আহরণের জন্য উৎসাহমূলক নীতি।
আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা ও প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ। বিদেশী ও অভ্যন্তরীণ মানবসম্পদ বিনিময় ও শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে নেতৃত্ব উন্নয়ন।
বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য গুরুত্ব : নেতৃত্বের ঘাটতি শুধুমাত্র ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলবে না, এটি অর্থনীতির বৃহত্তর ক্ষেত্রে ঋণদান, বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায়ও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, ডিজিটাল ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড বৃদ্ধি ও বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে নেতৃত্বের অভাব বড় বাধা হিসেবে দেখা দিতে পারে।
গভর্নরের সতর্কবার্তা সময়োপযোগী বলে মূল্যায়ন করছেন অর্থনীতি ও ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে, আগামী বছরগুলোতে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত নেতৃত্ব সঙ্কট ও দক্ষতা অভাবের কারণে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।



