বিশেষ সংবাদদাতা
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে দলগুলোর নিজস্ব প্রতীকে ভোট করার বাধ্যবাধকতার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ২০ অনুচ্ছেদের পূর্বের বিধান অর্থাৎ জোটবদ্ধ দলগুলোর ইচ্ছেমতো জোটের প্রতীকে নির্বাচন করার সুযোগ বহাল রাখার দাবিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনকে চিঠি দিয়েছে দলটি। বিএনপি বলছে, এই সংশোধনী নিয়ে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবনা ছিল না এবং এটি গণতান্ত্রিক অধিকারকে ক্ষুণœ করেছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সাথে বিএনপির প্রতিনিধিদলের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে আলোচনা ও দলের অবস্থান তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মো: ইসমাইল জবিউল্লাহ।
তিনি বলেন, জোট করলেও ভোট করতে হবে নিজস্ব প্রতীকে-গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) এই সংশোধনীর সাথে বিএনপি একমত নয়। পূর্বের অবস্থা বহাল রাখার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে সিইসিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এই সংশোধনীর প্রস্তাব ছিল না। বিএনপি এই সংশোধনীর সাথে একমত পোষণ করে না। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, আলোচনা না করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণœ হয়েছে বলে বিএনপি মনে করে।
ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, এই বিষয়ে উপদেষ্টা পর্যায়েও চিঠি দেয়া হবে। তার যুক্তি হলো; জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করার সময় দলগুলোর প্রতীক পছন্দের অধিকার থাকা উচিত। প্রসঙ্গত সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী চূড়ান্ত করেছে, যেখানে জোটবদ্ধ নির্বাচনেও প্রত্যেক প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই সংশোধনী বাতিলের দাবিতে বিএনপি নির্বাচন কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছে।
সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারসংক্রান্ত বিষয়গুলোর অনেকগুলোতে আমরা সবাই সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি ও আরপিওর যে খসড়াটা উত্থাপন করা হয়েছে, এটাতে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাতে বিএনপির কোনো সম্মতি ছিল না।
জোটবদ্ধ নির্বাচনে নিজস্ব দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হলে ছোট রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হতে উৎসাহিত হবে না বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, এটাতে তাদেরও (ছোট রাজনৈতিক দলগুলোরও) সম্মতি নেই, আমাদেরও সম্মতি নেই। এটা নির্বাচন কমিশন থেকে একতরফাভাবে কেন উত্থাপন করা হলো জানি না। আরপিওর অধ্যাদেশের খসড়ার ওপরে মতামত চেয়েছিলেন। আমরা মতামত জানিয়েছিলাম।
ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, ‘জোটবদ্ধ হয়ে রাজনীতি করা কিংবা নির্বাচন করার অধিকার থাকলে রাজনৈতিক দলগুলোর ইচ্ছে অনুযায়ী নিজ দল কিংবা জোটবদ্ধ যেকোনো দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করাও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। সে অধিকার ক্ষুণœ করার কোনো সুযোগ আছে বলে বিএনপি মনে করে না। তিনি আরো বলেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজস্ব বিবেচনায় জোটবদ্ধ হয়ে নিজ দল বা জোটের অন্য কোনো দলের প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, যা তাদের রাজনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকার।
ইতঃপূর্বে এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো জটিলতা বা সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। সুন্দরভাবে নির্বাচন হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে এই প্রক্রিয়া বা এই অনুচ্ছেদ সংশোধনের কোনো দাবি করা হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের নিজের দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার অধিকার রয়েছে। অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু যখন জোটবদ্ধ হয় তখন সে তার নিজের প্রতীক নিয়ে করবে না জোটের অন্য কোন দলের প্রতীক নিয়ে করবে সেটার সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকারও তার এবং সেভাবেই নির্বাচন হয়েছে। সিইসির সাথে বৈঠকে ইসির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জকরিয়া উপস্থিত ছিলেন।



