চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কট

Printed Edition

হুসাইন মালিক (চুয়াডাঙ্গা)

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল নামেই জেলা সদর হাসপাতাল, বাস্তবে যেন সঙ্কটের প্রতিচ্ছবি। ২৫০ শয্যার বিশাল ভবনে চলছে মাত্র ৫০ শয্যার জনবল ও ১০০ শয্যার খাবার-ওষুধের বরাদ্দে। চিকিৎসক সংকটে জর্জরিত হাসপাতালটির অপারেশন থিয়েটার গত ১০ মাস ধরে কার্যত অচল। যে কারণে জটিল রোগীরা পড়ছেন চরম দুর্ভোগে, ঝুঁকি নিয়েই চিকিৎসা নিচ্ছেন স্থানীয়রা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৭০ সালে ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল। ২০০৩ সালে এটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও কেবল খাবার ও ওষুধের বরাদ্দ বাড়ানো হয়, জনবল নয়। ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ২৫০ শয্যার ছয়তলা ভবনের উদ্বোধন করেন। সাড়ে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই ভবন আজও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি, চলছে পুরনো কাঠামোর জনবলেই।

বর্তমানে হাসপাতালে ২৯টি পদ শূন্য। সিনিয়র চক্ষু কনসালট্যান্ট, অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ, মেডিসিন ও শিশু রোগ কনসালট্যান্টসহ ৯ জন চিকিৎসকের পদ ফাঁকা রয়েছে। এছাড়া ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর আরো ২০টি পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি।

অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট না থাকায় গত জানুয়ারি থেকে বন্ধ ছিল অপারেশন থিয়েটার। সম্প্রতি জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন ডা: আ স ম মোস্তফা কামালকে ডেপুটেশনে এনে সাময়িকভাবে অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু এটি স্থায়ী সমাধান নয়, বলছেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ছোট অপারেশনও করতে পারছি না। প্রতিদিনই রোগী রেফার করতে হচ্ছে কুষ্টিয়া বা রাজশাহীতে। এতে খরচ বাড়ছে, জীবনহানি ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে।’

রোগীদের অভিযোগ, প্রতিশ্রুত অপারেশন তারিখের পরও সপ্তাহের পর সপ্তাহ পার হয়ে যাচ্ছে। পুরুষ ওয়ার্ডের রোগী উজির আলী বলেন, ‘এক মাস হলো ভর্তি আছি, ডাক্তার বলেছিলেন সোমবার অপারেশন হবে, এখনো হয়নি। টাকা নেই, ঢাকায় যেতে পারি না।’

মহিলা সার্জারি ওয়ার্ডের রোগী কাঞ্চন বেগমের মেয়ে পারভিনা খাতুনের ক্ষোভ, ‘মায়ের অপারেশন সপ্তাহ ধরে পিছিয়ে যাচ্ছে। এখন তারা বলছে ‘অপেক্ষা করুন’। কতদিন অপেক্ষা করব?’

জুনিয়র সার্জারি কনসালট্যান্ট ডা: এহসানুল হক তন্ময় জানান, ‘অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্ট ছাড়া নিয়মিত অপারেশন চালানো যায় না। বিকল্পভাবে কিছু কাজ হচ্ছে, তবে এটি ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত বিশেষজ্ঞ নিয়োগ না হলে সঙ্কট আরো বাড়বে।’

চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যাপক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ‘শাহজাহান আলী বিশ্বাস বলেন, ‘১৬ লাখ মানুষের ভরসার এই হাসপাতালে মানবসম্পদের ভয়াবহ ঘাটতি অগ্রহণযোগ্য। হাসপাতালটি এখন চিকিৎসা নয়, দুর্ভোগের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।’

ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা: ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন বলেন, ‘হাসপাতালটি মূলত ১০০ শয্যার, কিন্তু জনবল ৫০ শয্যার, আর ভর্তি থাকে গড়ে ৩৫০ রোগী। অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ না থাকায় অপারেশনে ব্যাঘাত ঘটছে। আমরা বিকল্প ব্যবস্থায় কিছু কাজ চালাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, একজন ট্রেনিংপ্রাপ্ত সহকারী সার্জন যুক্ত হয়েছেন; কিন্তু এটি স্থায়ী সমাধান নয়। সরকারের কাছে অনুরোধ, দ্রুত দুটি অ্যানেসথেসিয়া কনসালট্যান্টসহ সব শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া হোক।’

চুয়াডাঙ্গার মানুষের প্রত্যাশা, ২৫০ শয্যার এই হাসপাতাল কাগজে নয়, বাস্তবেও যেন পূর্ণাঙ্গ হয়ে উঠে, যাতে রোগীরা চিকিৎসার জন্য আর রাজধানীর পথে ছুটতে না হয়।