চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে আওয়ামী শিক্ষক নেতা এক্সপার্ট!

ফ্যাসিস্ট দোসরদের পদোন্নতি দিতে তড়িঘড়ি সভা ডাকার অভিযোগ

Printed Edition

চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দোসরদের পদোন্নতি দিতে তড়িঘড়ি করে সিলেকশন কমিটির সভা আহবানের অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী আমলে গঠন করা সিলেকশন কমিটিতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেল ঘনিষ্ঠ এক আওয়ামী শিক্ষক নেতাকে এক্সপার্ট হিসেবে রাখা হয়। সেই আওয়ামী শিক্ষক নেতার স্বাভাবিক কার্যকাল শেষ হওয়ার আগেই বোর্ডের চেয়ারম্যান নিজের দল ভারী করতে বন্ধের দিনে এই আয়োজন বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।

বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, আজ শনিবার বেলা ১১টায় বোর্ডের সভাকক্ষে সিলেকশন কমিটির সভা আহবান করা হয়েছে। ওই কমিটিতে এক্সপার্ট হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক নেতা ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম তফজল হক। আওয়ামী আমলে সিলেকশন কমিটিতে নিয়োগ পাওয়া এই তফজল হক পতিত সরকারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং সে সময় নওফেলের কব্জায় থাকা প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ছিলেন। তাছাড়া তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বলেও জানা গেছে।

শনিবারে ডাকা এই সিলেকশন কমিটির সভায় বেশ ক’টি এজেন্ডা রাখা হলেও মূলত ফ্যাসিস্টের দোসর তিন কর্মকর্তার পদোন্নতির জন্য তড়িঘড়ি এই সভা আহবান বলে সূত্রের দাবি। সূত্র মতে, বিধি মোতাবেক সিলেকশন কমিটির সভা আহবান করার তিন কর্মদিবস আগে নোটিশ করতে হয়। কিন্তু শনিবারের সভার নোটিশ করা হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। তা ছাড়া বোর্ডের প্রশাসনিক প্রধান হলেন বোর্ডের সচিব। চট্টগ্রাম বোর্ড সৃষ্টির পর হতে কোনো সচিবকে বাদ দিয়ে সিলেকশন কমিটির সভা আহবান করা হয়নি। কিন্তু এবারের সভায় সচিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, যা রীতিমতো সন্দেহজনক বলছেন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা।

বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, যে তিন ফ্যাসিস্ট দোসরকে পদোন্নতি দেয়ার আয়োজন চলছে তাদের মধ্যে একজন সহকারী সচিব, একজন সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং অপরজন সহকারী কলেজ পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। পদ খালি না থাকা সত্ত্বেও এই ফ্যাসিবাদের দোসরদের ইন-সিটু (পূর্ববর্তী কর্মস্থলে বহাল রেখে উচ্চতর ধাপের সব সুবিধা প্রদান করা হবে) পদোন্নতি দেয়ার জন্যই মূলত এই আয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বোর্ড সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। এই পরিকল্পনায় যাতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে না হয়, সে জন্য বোর্ডের প্রশাসনিক প্রধান বোর্ড সচিবকে পর্যন্ত সভায় রাখা হচ্ছে না বলেও সূত্র জানায়। ওই সহকারী সচিব ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ দেয়া, চেক জালিয়াতি ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগে তিন দফায় শাস্তি ভোগ করেছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান যোগ দেয়ার পর তার সব শাস্তির আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেই শাস্তির কারণে কেটে নেয়া বেতন-ভাতার ১৫ লাখ টাকাও তাকে ফেরত দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মৎস্যজীবী লীগের এই সদস্যকেই এখন উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার তোড়জোড় চলছে বলে সূত্র জানায়।

সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে কর্মরত আরেক কর্মকর্তা মহিউদ্দিন চৌধুরীর আত্মীয় পরিচয়ে নওফেল শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে বোর্ডে দাবড়িয়ে বেড়াতেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গিয়ে উৎকোচ গ্রহণেরও অভিযোগ রয়েছে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বিজি প্রেসে দায়িত্ব পালন করার সময়েও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

সহকারী কলেজ পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত এক কর্মকর্তা আওয়ামী আমলে শিক্ষা বোর্ডে কক্সবাজারের আওয়ামী এমপি সাইমুম সরোয়ার কমলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে দাপটের সাথে চলতেন। বর্তমান চেয়ারম্যানের সাথে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে অনুমোদন কমিটির বৈঠকি সিদ্ধান্তকে পাল্টে ফেলে বিতর্কিত একটি প্রতিষ্ঠানকে ইংরেজি মাধ্যমে পাঠ দানের অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রেও এই কর্মকর্তার নাম আলোচনায় রয়েছে।

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদের কাছে নয়া দিগন্ত শনিবারে সভা আহবান বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বিষয়টি অতি গোপনীয় সে খবর কিভাবে পেলাম এমন প্রশ্ন করেন। পরে ওই কমিটির নওফেল ঘনিষ্ঠ সদস্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী সদস্য পরিবর্তনের সুযোগ নেই বলে তিনি জানান। আগামী ৪ ডিসেম্বর বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হবে বলেও তিনি জানান। কমিটির মেয়াদ শেষের আগে তড়িঘড়ি করে কেন সভা আহ্বান করা হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি ‘সো কনফিডেন্সিয়াল ম্যাটার’ বলে এড়িয়ে যান।