নিজস্ব প্রতিবেদক
আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার মামলায় জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দী দিতে গিয়ে পুলিশের (উপ-পরিদর্শক) এসআই মো: আশরাফুল হাসান ট্রাইব্যুনালে বলেছেন, ঘটনাস্থল থেকে ৭.৬২ লেখা ছয়টি রাইফেলের গুলি উদ্ধার করে জব্দ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ তিনি এ জবানবন্দী দেন।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে এ দিন তার সাক্ষ্য রেকর্ড করা হয়। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো: মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম ও প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ। সাথে ছিলেন প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আল নোমান, সহিদুল ইসলামসহ অন্যরা।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে আশুলিয়া থানায় কর্মরত এসআই আশরাফুল সাক্ষীর ডায়াসে ওঠেন। শপথ পাঠের পর তিনি জব্দ তালিকার সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দী দেন।
জবানবন্দীতে তিনি বলেন, ‘চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল দায়িত্বে ছিলাম। ওই সময় বেতার বার্তার মাধ্যমে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, আশুলিয়া থানা ভবনের পশ্চিম পাশে মনির ও লতিফ মণ্ডলের পুরনো টিনশেড বাড়ির সীমানা প্রাচীরের ভেতরে গুলি পড়ে আছে। পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে একটি চার্জারসহ ছয়টি রাইফেলের গুলি উদ্ধার করি। প্রতিটি গুলির পেছনে ইংরেজিতে ‘৭.৬২’ এবং অন্যান্য লেখা ছিল। পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া এসব গুলি জব্দ তালিকার মাধ্যমে জব্দ করি। উপস্থিত তিনজন সাক্ষীসহ আমিও জব্দ তালিকায় স্বাক্ষর করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘জব্দ তালিকায় সাক্ষী হিসেবে কনস্টেবল মো: মামুনুর রশিদ স্বাক্ষর করেন। উদ্ধারকৃত আলামত থানায় জমা দেয়া হয়। পরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে এসব আলামত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে পাঠাই।’
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে তাকে জেরা করেন পলাতক আট আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স ও আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। জেরায় আইনজীবী বলেন, তিনি ও আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলামত সংগ্রহের নাটক তৈরি করেছেন। জবাবে আশরাফুল হাসান বলেন, এ কথা সত্য নয়। এখন পর্যন্ত এ মামলায় ২০ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার এই মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য আছে।
গত ২১ অক্টোবর ১৪তম দিনের মতো সাক্ষ্য দেন একজন সাক্ষী। তিনিও জব্দ তালিকার সাক্ষী ছিলেন। ১৭-১৮তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দী দেন এএসপি এনায়েত ও শহীদ বায়োজিদ বোস্তামীর ভাই কারিমুল। ১৬ অক্টোবর ১৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দী দেন সিআইডির ফরেনসিক শাখার আলোকচিত্র বিশেষজ্ঞ ওমর ফারুক খান। ১৫ অক্টোবর এ মামলায় ১১তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ৯ অক্টোবর দশম দিনে সাক্ষ্য দেন শহীদ ওমর ফারুকের বাবা চান মিয়া। ১৪তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দীতে গত বছরের ৫ আগস্টের বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার সেই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা তুলে ধরেন। ২১ আগস্ট এ মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ওই সময় উপস্থিত আট আসামির সাতজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে দোষ স্বীকার করেন এসআই শেখ আবজালুল হক। একই সাথে রাজসাক্ষী হতে চেয়ে মামলার ব্যাপারে যা জানেন সব আদালতের কাছে বলতে চেয়েছেন। পরে তার দোষ স্বীকারের অংশটুকু রেকর্ড করেন ট্রাইব্যুনাল। পরে লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজসাক্ষী হয়েছেন তিনি।
এ মামলায় গ্রেফতাররা হলেন- ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো: আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো: শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, আবজাল ও কনস্টেবল মুকুল। আজ সকালেও কারাগার থেকে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তবে সাবেক এমপি সাইফুলসহ আটজন এখনও পলাতক।
গত ২ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সাথে অন্যান্য তথ্যসূত্র হিসেবে ৩১৩ পৃষ্ঠা, সাক্ষী ৬২, দালিলিক প্রমাণাদি ১৬৮ পৃষ্ঠা ও দুটি পেনড্রাইভ যুক্ত করা হয়। পরে এ মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।



