হামিদ সরকার, ডাঙ্গা শিল্প পার্ক, নরসিংদী থেকে ফিরে
- প্রপার্টি লিফট শিল্পে বিনিয়োগ ২০০ কোটি টাকা
- ৮০ শতাংশ লিফট বিদেশ থেকে আনতে হচ্ছে
- বর্তমানে বাংলাদেশে লিফটের বাজার ১৩শ’ কোটি টাকার
বর্তমানে বাংলাদেশে লিফটের বাজার ১৩০০ কোটি টাকার। কিন্তু ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ লিফট এখনো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। দেশেই বিশ^মানের লিফট তৈরির মাধ্যমে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে আরএফএল তার প্রপার্টি লিফট শিল্পে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। দেশের বাজারের পর এখন বিদেশেও তারা রফতানি করছে। বর্তমানে তারা মাসে ২৭০টি লিফট উৎপাদন করছে। ২০১৮ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত তারা সাত হাজারের বেশি লিফট হস্তান্তর করেছেন বলে জানান আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল।
নরসিংদীর ডাঙ্গা শিল্প পার্কে সরেজমিন ঘুরে লিফট তৈরির কার্যক্রম দেখা যায়। সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৮৮ সালে লিফট আমদানির মাধ্যমে এ ব্যবসায় যাত্রা শুরু করলেও ২০১৮ সাল থেকে নরসিংদীতে নিজস্ব কারখানায় আন্তর্জাতিক সেফটি স্টান্ডার্ড মেনে লিফট উৎপাদন শুরু করে প্রপার্টি লিফট। শুরুতে বিদেশ থেকে আমদানি করা কম্পোনেন্ট দিয়ে লিফট তৈরি করলেও পরবর্তীতে নিজেরাই কারখানাতে উৎপাদন শুরু করে লিফটে ব্যবহৃত বিভিন্ন কম্পোনেন্ট। প্রপার্টি লিফটের প্রকৌশলীরা বলেন, ক্রোতাদের বিশ্বমানের লিফট সরবরাহে উন্নত প্রযুক্তির মোটর ও কন্ট্রোল প্যানেলে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি মান পরীক্ষার জন্য উন্নতমানের ল্যাব, আধুনিক টেস্টিং ফ্যাসিলিটিসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে কারখানা গড়ে তোলে প্রপার্টি লিফট। এতে এক দিকে যেমন মান ও নিরাপত্তার দিক থেকেও গ্লোবাল ব্র্যান্ডের সাথে সমানতালে পাল্লা দিচ্ছে, অন্য দিকে দেশে লিফট তৈরিতে মূল্য সংযোজন বেড়ে যাওয়ায় বিদেশ থেকে আমদানি করা লিফটের চেয়ে দামে সাশ্রয়ী হচ্ছে। দুইতলার বেশি ভবনে লিফট এখন প্রয়োজনীয় হলেও দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই এটি স্থাপন করেন না। দেশেই ব্যাপকভাবে লিফট উৎপাদিত হলে দাম কমে যাবে। আমদানি কমে যাবে। ফলে চাহিদা রাতারাতি বেড়ে যাবে। কিছু ইলেকট্রোমেকানিক্যাল উপাদান বাদ দিলে প্রায় সব কিছুই দেশে তৈরি সম্ভব, আর সেটি করলে উৎপাদন খরচও আরো কমে আসবে, যা লিফটের চাহিদাকে আরো ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে। প্রপার্টি লিফটস নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান পূরণ করে থাকে। এতে ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল দুই ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। শুধু নিরাপত্তা নয়, বিদ্যুৎ সাশ্রয়েও গুরুত্ব দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। নরসিংদীর কারখানায় বর্তমানে ২১০ জন কর্মী কাজ করছেন। ইনস্টলেশন ও সার্ভিসিংয়ের জন্য একহাজারের বেশি মানুষ যুক্ত। সারা দেশে নিরাপদ লিফট স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে আরো পাঁচ হাজার লোক নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
সংশ্লিষ্টদের তথ্য মতে, বর্তমানে বাংলাদেশে লিফটের বাজার ১৩০০ কোটি টাকার। যেখানে বছরে গড়ে সাড়ে চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার লিফট বিক্রি হয়। বার্ষিক প্রবৃদ্ধি গড়ে ১০-১৫ শতাংশ। এই হার ভবিষ্যতে আরো বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে দেশীয় কোম্পানিগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা বাড়লে এবং সরকার থেকে নীতি সহায়তা পাওয়া গেলে এই শিল্প আরো বিকশিত হবে। বর্তমানে লিফটের চাহিদা মূলত ঢাকাসহ বড় বড় নগরকেন্দ্রিক। ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে লিফটের চাহিদা ৪৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২০ শতাংশ। দেশে লিফটের চাহিদা আরো বাড়বে বলে মনে করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
আরএফএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আর এন পাল বলেন, এক সময় লিফট বলতে কেবল আমদানিকৃত লিফটকেই বোঝানো হতো। আমদানিকৃত লিফটের দাম যেমন বেশি। তেমনি পুরনো ভবনে কাস্টমাইজড লিফট বসানোর সুযোগও সীমিত ছিল। অনেকে ৪তলা বাড়ি কিংবা ৩তলা একটি মার্কেটের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে লিফট চান। আমরা সেই বাস্তবতায় দেশে লিফট তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করি। তিনি জানান, বর্তমানে পায়রা থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট, কোরিয়ান ইপিজেড, বে ইকোনোমিক জোন, ইউএন আইএলও অফিস, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো লিমিটেড, পিডিএল পদ্মা রিসোর্ট, চট্টগ্রাম আর্মি মেডিক্যাল কলেজসহ অসংখ্য জায়গায় প্রপার্টি লিফট ব্যবহার হচ্ছে। তিনি বলেন, এ বছর থেকেই জার্মানি, ইউরোপ ও আমেরিকার মেলায় অংশগ্রহণ শুরু করবে প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে বাংলাদেশী কোম্পানির লিফটের উৎপাদন সক্ষমতা তুলে ধরা হবে।
প্রপার্টি লিফটের সিওও মো: মঈনুল ইসলাম বলেন, বাজারে এখন প্যাসেঞ্জার লিফট, কার্গো লিফট, হাসপাতাল লিফট, হোম লিফট, ক্যাপসুল লিফট, হাইড্রোলিক লিফট ও সিজার লিফট পাওয়া যায়। ধারণক্ষমতা ও ফিচারের ওপর ভিত্তি করে এসব লিফটের দাম ১৫ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত। সমমানের আমদানিকৃত লিফটের তুলনায় দেশে উৎপাদিত লিফটের দাম ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা কম। তিনি বলেন, দেশে লিফট উৎপাদন ছাড়াও বর্তমানে প্রপার্টি লিফটস বিশ্বসেরা কোনে, ম্যাকপুয়ার্সা ও এসআরএইচ লিফটের বাংলাদেশে একমাত্র পরিবেশক। তিনি বলেন, সঠিক নীতি সহায়তা ও গণসচেতনতা বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশ শুধু লিফটে স্বনির্ভরই হবে না, বৈশ্বিক বাজারেও শক্ত অবস্থান করে নিতে পারবে।


