১৪ বছরেও আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে নেই বুটেক্স

শেফাক মাহমুদ, বুটেক্স
Printed Edition

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) দেশের একমাত্র বিশেষায়িত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয়গুলো পড়ানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের তৈরী পোশাক শিল্পে উদ্যোক্তা ও শিল্পায়নকে টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১৪ বছরেও তালিকাভুক্ত হয়নি বিশ্ব মানদণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে।

পর্যাপ্ত গবেষণা, গবেষণাপত্রের সুনাম, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুপাত, আন্তর্জাতিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী, পর্যাপ্ত পিএইচডিধারী শিক্ষকসহ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের অনেক শর্তই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নেই। বিশ্বমানের র‌্যাংকিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ কাজ করছে না বলে জানা যায়। এ ছাড়া কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি বিগত সময়ের কোনো প্রশাসনকে।

বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং নির্ধারণে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও নির্ভরযোগ্য সংস্থাগুলো হলো কিউএস, টাইমস হায়ার এডুকেশন, অ্যাকাডেমিক র‌্যাংকিং অব ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিস ও ইউএস নিউজ অ্যান্ড ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট। এসব সংস্থাগুলো মূলত বিভিন্ন ধরনের মানদণ্ড ও সূচক ব্যবহার করে বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিং প্রকাশ করে থাকে।

কিউএস অ্যাকাডেমিক খ্যাতি, চাকরির বাজারে সুনাম, শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত, শিক্ষক প্রতি গবেষণা-উদ্ধৃতি, আন্তর্জাতিক শিক্ষক অনুপাত, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অনুপাত, আন্তর্জাতিক গবেষণা নেটওয়ার্ক, সাসটেইনিবিলিটি ও কর্মসংস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিবেচনা করে বৈশ্বিক উচ্চশিক্ষালয়গুলো থেকে। অন্যদিকে টাইমস হায়ার এডুকেশন ৫টি সূচকের ওপর ভিত্তি করে বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং নির্ধারণ করে। সেগুলো হলো শিক্ষা (শিক্ষা প্রদানে পরিবেশ), গবেষণা (গবেষণার সংখ্যা, মান, ধরন ও পরিবেশ), গবেষণার ফল সাইটেশন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও ইন্ডাস্ট্রি ইনকাম।

ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো: নাজমুছ সাকিব বলেন, বুটেক্স মূলত একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় যার ক্ষেত্র শুধু বস্ত্র প্রকৌশলে সীমাবদ্ধ এবং অ্যাকাডেমিক বৈচিত্র্য কম যা অনেক সময় র‌্যাংকিংয়ে প্রভাব ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার উপযোগী পরিবেশ না থাকা এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে স্বীকৃতি কম থাকাটাও র‌্যাংকিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের না আসার কারণ।

ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আব্বাস উদদীন শায়ক বলেন, কতকগুলো মানদণ্ড বিচার করে বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং নির্ধারণ করা হয়। র‌্যাংকিংয়ে আসতে হলে প্রত্যেকটা মানদণ্ড ধরে ধরে কাজ করতে হয়।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ে আসতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এটি অর্জন করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটওয়ার্ড অ্যাক্টিভিটিস বা বহিরাঙ্গন কার্যক্রমের দিকে মনোযোগ দেয়া।

ডাইস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে র‌্যাংকিংয়ে পৌঁছানোর জন্য কোনো চেষ্টা করা হয়নি।

টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো: মাসুম বলেন, বাস্তবতা হলো আমাদের বর্তমান অবস্থা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ে যাওয়া প্রায়ই অসম্ভব। র‌্যাংকিংয়ে যেতে হলে আগে বিশ্ববিদ্যালয় হতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় নাম হলেই শুধু বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া যায় না। র‌্যাংকিংয়ে যেতে হলে আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনে পরিবর্তন আনতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: জুলহাস উদ্দিন বলেন, উচ্চশিক্ষার পরিধি বৃদ্ধি ও মানসম্পন্ন গবেষণার পরিবেশ তৈরি করার জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো অবকাঠামো নেই। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বেশি আছে যা মানসম্পন্ন শিক্ষার জন্য বাধা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের সংখ্যাও কম আছে। পূর্বে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী থাকলেও বর্তমানে নেই। এসব মানদণ্ডের ঘাটতি থাকার কারণেই র‌্যাংকিংয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আসতে পারছে না।