নিজস্ব প্রতিবেদক
- অবৈধভাবে রাখা ৭ কোটি টাকার কেমিক্যাল ছিল গোডাউনে
- মামলা হলেও গ্রেফতার নেই
রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া কেমিক্যাল গোডাউনের ভেতরে উচ্চমাত্রার বিষাক্ত হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। গোডাউনের ভেতরে থাকা হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাসের মাত্রা ছিল ১৪৯ পিপিএম। এই গ্যাস কোথাও ১০০ পিপিএমের বেশি থাকলে মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে অচেতন হয়ে মারা যেতে পারে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে গোডাউন পরিদর্শন শেষে ডিএমপির বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান এ তথ্য জানান।
গোডাউনে সাত কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ছিল বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। আগুনে এসব কেমিক্যাল পুড়ে ভস্মীভূত হয়ে গেছে। ফলে ফায়ার সার্ভিস পানি ছিটিয়ে ভস্মীভূত স্তূপ পাতলা করছে এবং ড্রেনেজ সিস্টেম করে বের করে দিচ্ছে। মর্মান্তিক এই অগ্নিদুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৪টায় ডিএমপির বম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের ১২ সদস্য গ্যাস ডিটেকটর ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে গুদামের ভেতরে যান। গুদামে কী ধরনের বিষাক্ত গ্যাস রয়েছে তা নির্ধারণ করেন তারা। এরপর সেখান থেকে বেরিয়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহমুদুজ্জামান বলেন, গ্যাস ডিটেকটর দিয়ে গুদামের বিষাক্ত গ্যাসের মাত্রা নেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আমরা হাইড্রোজেন সালফাইড, যেটা টক্সিক একটা গ্যাস এবং মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর, সেটার ফাইন্ডিংস পেয়েছিলাম ২০ পিপিএমের ওপরে, এটাও ডেঞ্জারাস। গতকাল আমি ভেতরে পেয়েছি ১৪৯ পিপিএম। ১০০ পিপিএমের ওপরেই যেটা তাৎক্ষণিকভাবে জীবনের জন্য বিপজ্জনক, যদি যথাযথ নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়া ভেতরে যায়। এ ছাড়া আশপাশে প্রচুর বিষাক্ত উপাদান বাতাসে রয়েছে। আশপাশে অন্তত ১৫০-৩০০ মিটার এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেয়া ভালো।
গুদামের ভেতরে এখনো অনেক রাসায়নিকের বস্তা পড়ে আছে জানিয়ে মাহমুদুজ্জামান বলেন, গুদামের বাইরে হাইড্রোজেন সালফাইডের মাত্রা ৭০-৮০ পিপিএমের মতো। বৃহস্পতিবার কার্বন মনো-অক্সাইডের উপস্থিতি আমরা পাইনি। কিন্তু শুক্রবার গুদামে তিন পিপিএম পেয়েছি। ঘটনাস্থলের আশপাশে কাউকে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, উৎসুক মানুষ ও অনেক নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা ভিড় করছেন। তাদের প্রতি সহানুভূতি আছে। তবে মাথায় রাখতে হবে, এটা সাধারণ কোনো আগুন নয়, কেমিক্যালের আগুন। এর আশপাশে যাওয়া যাবে না। কাছে গেলেই এটা কোনো না কোনোভাবে বিপজ্জনক হতে পারে। আমরা প্রাপ্ত তথ্য বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে অবহিত করেছি। তারা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।
মর্মান্তিক এই অগ্নিদুর্ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানির ঘটনায় বুধবার রাতে একটি হত্যা মামলা করেছেন নিহত গার্মেন্টশ্রমিক ছানোয়ার হোসেনের ভাই সাইফুল ইসলাম। মামলায় আলম কেমিক্যাল গোডাউনের মালিক শাহ আলমসহ আটজনকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার চার দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
মামলার বিষয় জানতে চাইলে রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম বলেন, কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব পরীক্ষক শুভ জয় বৈদ্য বলেন, শুক্রবার ল্যাব বন্ধ থাকার কথা থাকলেও শুধু ১৬টি লাশের পরিচয় শনাক্তের জন্য আমাদের ল্যাব চালু ছিল। অন্যান্য কাজ বন্ধ রেখে লাশের পরিচয় শনাক্তকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। লাশ থেকে এবং লাশের দাবিদারদের থেকে সংগ্রহ করা নমুনা ল্যাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে কতদিন সময় লাগতে পারে সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।



