নয়া দিগন্ত ডেস্ক
গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের দুই বছর পূর্ণ হবে আগামী ৭ অক্টোবর। এই সময়ের মধ্যে ইসরাইল এত বেশি প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে যে, গাজায় জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৬৪ হাজার ৭০০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে আরো দেড় লাখের বেশি। খবর তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদমাধ্যম আনাদোলুর।
খবরে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের আগ্রাসন শুরুর পর এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৪ হাজার ৬৫৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অবরুদ্ধ গাজায় নতুন করে আরো পাঁচজন অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন।
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বুধবার সন্ধ্যার আগের ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন হাসপাতাল ৪১টি লাশ গ্রহণ করেছে। এ সময় ইসরাইলি হামলায় আরো ১৮৪ জন আহত হয়েছে। এতে মোট আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৬৩ হাজার ৫০৩ জনে। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এখনো বহু লাশ ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে আছে। উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে না পারায় তাদের সরানো সম্ভব হয়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, মানবিক সহায়তা সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে আরো ১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ৩০ জনের বেশি। এতে চলতি বছরের ২৭ মে থেকে এ পর্যন্ত সহায়তা নিতে গিয়ে ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪৫৬। আহত হয়েছে ১৭ হাজার ৮৬১ জনের বেশি।
এ ছাড়া অপুষ্টি ও অনাহারে আরো পাঁচজন ফিলিস্তিনি মারা গেছে। তাদের মধ্যে একজন শিশু। এতে গত বছরের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০৪। এদের মধ্যে ১৪১ জনই শিশু। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এর মধ্যে ১২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে জাতিসঙ্ঘ সমর্থিত ক্ষুধা পর্যবেণ সংস্থা ‘ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্যাসিফিকেশন’ গত মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে গাজাকে দুর্ভিপীড়িত অঞ্চল ঘোষণা করার পর। মৃতদের মধ্যে ২৬ জন শিশু।
চলতি বছরের ২ মার্চ থেকে ইসরাইলি কর্তৃপ গাজার সব সীমান্ত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ২৪ লাখ মানুষের এই উপত্যকা এখন দুর্ভিে নিপতিত। মার্চের ১৮ তারিখ থেকে ইসরাইলি সেনারা আবারো গাজায় হামলা শুরু করে। এরপর থেকে তারা আরো ১২ হাজার ৯৮ জনকে হত্যা করেছে এবং আহত করেছে ৫১ হাজার ৪৬২ জনকে। এতে জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তি ভেঙে যায়। গত নভেম্বরে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তৎকালীন প্রতিরামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। গাজায় চালানো এই যুদ্ধের কারণে ইসরাইল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে।
ফোন ছাড়া নামাজ পড়তে যাওয়ায় বেঁচে গেছেন হামাস নেতারা
কাতারের দোহায় ইসরাইলি হামলায় জ্যেষ্ঠ হামাস কর্মকর্তাদের বেঁচে যাওয়ার কারণ হলো, হামলার কিছুণ আগে তারা ফোন ছাড়া সভাক থেকে বেরিয়ে অন্য কে চলে যান। আরব সূত্রের বরাত দিয়ে ইসরাইলের হায়োম সংবাদপত্র এ কথা জানিয়েছে। কাতারের দোহায় ইসরাইলি হামলার কিছুণ আগে দুপুরের নামাজ পড়তে তারা ফোন ছাড়া সভাক থেকে বেরিয়ে যান। আরব সূত্র সংবাদপত্রটিকে বলেছে, হামাস কর্মকর্তারা জোহরের নামাজ পড়ার জন্য অন্য কে চলে যান। কর্মকর্তারা তাদের মোবাইল ফোন টেবিলে রেখে গিয়েছিলেন। এর ফলে ইসরাইলি ট্র্যাকিং সিস্টেম বিভ্রান্ত হয়েছে।
‘গণহত্যায় পরিবেশ আরো জটিল হচ্ছে’
গাজা শহরের বিভিন্ন এলাকায় ডজনখানেক বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে, যার উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনিদের ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দেয়া। এই তীব্রতা বাড়ানোর সাথে সাথে ইসরাইল বারবার সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়েছে গাজা শহর ছেড়ে যাওয়ার জন্য। এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইসরাইলকে ‘অবিলম্বে’ এই গণ বাস্তুচ্যুতির নির্দেশ প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি একে ‘নিষ্ঠুর’ ও ‘অবৈধ’ বলে অভিহিত করেছে এবং সতর্ক করেছে যে এটি ‘গণহত্যা পরিবেশকে আরো জটিল করে তুলছে।’ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বারবার এবং স্পষ্টভাবে বলেছে যে গাজা উপত্যকার ভেতরে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি বা বহিষ্কার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন এবং তা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল।’
মধ্যপ্রাচ্যের জন্য অ্যামনেস্টির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হেবা মোরায়েফ বলেছেন, ‘এই নির্দেশটি উত্তর গাজার জন্য ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে জারি করা গণ বাস্তুচ্যুতির পুনরাবৃত্তি নিষ্ঠুর এবং অমানবিক।’ অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, যারা এই নির্দেশের পর পালাতে চাইছেন, তাদের অনেকেই অর্থের অভাবে বা ইসরাইল নির্ধারিত ছোট এলাকায় জায়গা না পাওয়ায় তা করতে পারছেন না। গাজা শহর থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, মানুষ দণি ও মধ্য গাজার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, ‘কিন্তু অনেকেই ফিরে আসছেন, কারণ তারা থাকার জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না।’
তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে গাজায় কোনো নিরাপদ জায়গা নেই, এমনকি ইসরাইল ঘোষিত ‘মানবিক অঞ্চল’ও নয়। উত্তর থেকে দণি গাজায় যাত্রা এখন জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, তারা ইসরাইলের নির্দেশ সত্ত্বেও গাজা শহরে অবস্থান করবে। ডব্লিউএইচও এর মহাপরিচালক তেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস এক্স-এ প্রকাশিত বিবৃতিতে বলেছেন, তারা ইসরাইলের নির্দেশে ‘ভীষণভাবে মর্মাহত’। সংস্থাটি বলেছে, নির্ধারিত সরিয়ে নেয়ার অঞ্চলটি বাস্তুচ্যুতদের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা বা পরিসরের কোনোটিই সরবরাহ করতে পারে না। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এই বিপর্যয় মানবসৃষ্ট, এবং এর দায় আমাদের সবার।’ ডব্লিউএইচও এেেত্র ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি’ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।
পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনি মেয়রসহ চারজন আটক
পশ্চিমতীরের জেনিনের সিলাত আল-জাহর শহর থেকে মেয়রসহ চারজনকে আটক করেছে ইসরাইলি দখলদার বাহিনী (আইওএফ)। ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা এ তথ্য জানিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আইওএফ জেনিনের দেিণ অবস্থিত সিলাত আল-জাহর শহরে অভিযান চালিয়ে মেয়র আবদুল ফাত্তাহ আবু আলিসহ আরো কয়েকজনকে তাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আটক করে। সূত্র আরো জানিয়েছে, আইওএফ জেনিন শহরের দেিণ অবস্থিত জাবা শহরে অভিযান চালিয়ে জায়েদ কানানকে আটক করে। তারা জেনিনের পশ্চিমে অবস্থিত কাফর দান শহরেও অভিযান চালায়, শহরের রাস্তায় তাদের গাড়ি মোতায়েন করে, নাগরিকদের গাড়ি তল্লাশি করে, বেশ কয়েকটি বাড়িতে অভিযান চালায় এবং ইয়ামেন মারই এবং মোহাম্মদ আজ্জাম মারইকে আটক করে।


