কালীগঞ্জে কুমোরপাড়ায় ঠিলে তৈরির ব্যস্ততা বেড়েছে মৃৎশিল্পীদের

Printed Edition
কালীগঞ্জে কুমোরপাড়ায় ঠিলে তৈরির ব্যস্ততা বেড়েছে মৃৎশিল্পীদের
কালীগঞ্জে কুমোরপাড়ায় ঠিলে তৈরির ব্যস্ততা বেড়েছে মৃৎশিল্পীদের

রুহুল আমিন সৌরভ কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)

শীতের আগমনে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কুমোরপাড়াগুলোতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা। খেজুর রস সংগ্রহের মৌসুম শুরু হওয়ায় বেড়েছে মাটির কলস বা ঠিলের চাহিদা। এই ঠিলেই সংগ্রহ করা হয় খেজুরের মিষ্টি রস, যা পরে গুড় ও পিঠা-পায়েস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ফলে গ্রামের কুমোরপাড়ায় এখন দিনরাত চলছে মাটির ঠিলে তৈরির ধুম।

কালীগঞ্জের শিবনগর কুমোরপাড়ায় গেলে দেখা যায়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই ব্যস্ত মাটির কলস তৈরিতে। কেউ কাঁচা মাটি প্রস্তুত করছেন, কেউ চাকার ঘূর্ণনে কলস বা ঠিলে বানাচ্ছেন, আবার কেউ সেগুলো রোদে শুকাতে নিয়ে যাচ্ছেন। একপাশে সাজানো শুকনো কলস, অন্যপাশে ধোঁয়া উড়ছে ঠিলে পোড়ানোর চুল্লিতে। মৃৎশিল্পীদের এখন নাওয়া-খাওয়ারও যেন সময় নেই।

মৃৎশিল্পীরা জানান, এ কাজ শুধু জীবিকার জন্যই নয়- এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্য। যুগের পর যুগ ধরে আমরা এই ধারাকে জিইয়ে রেখেছি। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন এই পেশা টিকে থাকা বড় কঠিন হয়ে পড়েছে। প্লাস্টিক ও স্টিলের পণ্যের দাপটে মাটির জিনিসের বাজার অনেকটা সঙ্কুচিত। তবুও শীত এলেই খেজুর রসের কারণে ঠিলের চাহিদা বাড়ে, তখন কিছুটা স্বস্তি ফেরে কুমোরপাড়ায়। শিবনগর গ্রামের অখিল পাল বলেন, শীত এলেই আমাদের ব্যস্ততা বাড়ে। খেজুর রসের জন্য ঠিলে বানাতে হয় প্রচুর। দিনরাত কাজ করি, তবু চাহিদা মেটানো যায় না।

গোমরাইল গ্রামের তপু পাল বলেন, এটি বাপ-দাদার পেশা, তাই ধরে রেখেছি। প্লাস্টিকের জিনিস আসায় বিক্রি কমেছে। কিন্তু শীতকালে খেজুর রসের জন্য মাটির ঠিলের প্রয়োজন পড়বেই। তাই শীতে আমাদের কাজ বেড়ে যায়। তবে এঁটেল মাটি পাওয়া এখন বেশ মুশকিল হয়। এক ট্রলি এঁটেল মাটির দাম ৩০ হাজার টাকা। কয়েক বছর আগেও ১০ হাজারে পাওয়া যেত। আরো আগে তো এঁটেল মাটি কিনে আনতে হতো না। এমনিতেই পাওয়া যেত।

অনুপমপুর গ্রামের সুবোল পাল বলেন, আগে আগুনে পোড়ানোর জন্য লাকড়িও সহজে পাওয়া যেত। এখন লাকড়ি কিনে আনতে হয়। লাকড়ির দামও বেড়েছে। অনেক সময় কাঠের অভাবে ঠিলে পোড়াতেও পারি না। ঠিলে না পোড়ালে তো সেটি ব্যবহারের উপযোগী হয় না।

মৃৎশিল্পীরা জানান, সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা না পেলে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প দ্রুত হারিয়ে যাবে। তাদের দাবি- ঐতিহ্য রক্ষায় সহজ শর্তে ঋণ, কাঁচামাল সহায়তা ও প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিলে এই শিল্প আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারে।