ফখরুল ইসলাম সাগর দেবিদ্বার (কুমিল্লা)
জুলাই ছাত্র আন্দোলনের ৪ আগস্ট কুমিল্লার দেবিদ্বারে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে শহীদ হন আবদুর রাজ্জাক রুবেল। সন্ত্রাসীরা আমার বুকের ধন কাইড়া নিলো। সংসারটা সে আগলাইয়া রাখত। চার মাইয়ার পর এই পোলা হইছিল। ছোটবেলায় ওর বাপ মারা যায়। আমি হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে পুত পালছি। কিছু অমানুষ গুলি কইরা, কুপাইয়া, পিটাইয়া আমার মানিক চানরে মাইরা ফেলল! আহারে, আমার পোলার দমটা জা-নি কেমনে বের হইছেৎ। এক বছর হইছে, আমার রুবেল আর মা কইয়া ডাক দেয় না। রাস্তাঘাটে কত মানুষ দেখি, কিন্তু আমার পোলারে দেখি না। নয়া দিগন্তের সাথে আলাপচারিতায় কান্নাজড়িত কণ্ঠে এসব বলেন কুমিল্লার দেবিদ্বারের শহীদ আবদুর রাজ্জাক রুবেলের মা হোসনেআরা বেগম।
তিনি স্মৃতিচারণ করে আরো বলেন, ‘মারা যাওয়ার দিন পোলা দুপুরে ফোন দিছিল। কইছিল ‘মা, আমি ভাত খাব, হ্যাপীরে কও ভাত বাড়তে।’ আমি রাইন্ধা বসে ছিলাম, ভাবছিলাম, আইবো একসাথে খামু। কিন্তু পুত তো আইল না, লাশ হইয়া আইল।’
শহীদ রবেল-এর স্ত্রী হ্যাপী আক্তার বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে যা হারিয়েছি, কোনো কিছুর বিনিময়েই সেই অভাব পূরণ হবার নয়। সরকার যতই অনুদান দিক, যতই সাহায্য-সহযোগিতা করুক, আমার সন্তানদের যতই প্রতিষ্ঠিত করে দিক, তাদের বাবার অভাব কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেটা জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়ে এতিম হলো। এখন সে ‘বাবা বাবা’ বলে ডাকে। আমি তাকে বাবার মুখ কোথায় দেখাব? কীভাবে এই শোক ভুলব?’
হ্যাপী আর বলেন, ‘আমার মেয়েটার বয়স এখন পাঁচ বছর চলছে। সে এখনো জানে না তার বাবা কোথায়। স্কুলে ভর্তি করিয়েছি। যখন দেখে অন্যদের বাবা স্কুল থেকে নিয়ে যায়, তখন বাসায় ফিরে কান্নাকাটি করে আর বলে ‘মা আমার বাবা কোথায়? বাবা আমাকে কেন নিতে আসে না?’ আমি মিথ্যে বলি, ‘তোমার বাবা বেড়াতে গেছে।’ কিন্তু আর কত দিন এই মিথ্যা সান্ত¡না দেবো?’
এক বছরের শোকের ভার বয়ে বেড়ানো এই নারী বলেন, ‘বছর ঘুরে আগস্ট তো ঠিকই আসছে, কিন্তু আমার স্বামী তো আসলো না। আমি না পেলাম স্বামীকে, না পেলাম স্বামীর হত্যার বিচার! আমার স্বামীর কোনো শত্রু ছিল না। সে বাস চালাতো। গুলি করার পরও যদি তারা থেমে যেত, তা হলে হয়তো সে বাঁচতো। কিন্তু না, তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘সরকার যে সাহায্য করেছে, তা দিয়ে কোনো মতে সংসার চলছে। বাচ্চার খাবার, ওষুধ, শাশুড়ির চিকিৎসা, নিত্যদিনের খরচ এর মধ্যেই চালাতে হয়।’
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা সদরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা চালায়। দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অদূরে আবদুর রাজ্জাক রুবেলকে প্রথমে গুলি করে, পরে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে তারা।


