রাজাপুর (ঝালকাঠি) সংবাদদাতা
বিষখালী নদীর ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার মানকি, সুন্দর ও বাদুরতলা গ্রাম। প্রতিনিয়তই নদীতে ভেঙে পড়ছে মানুষের ঘরবাড়ি, কৃষিজমি ও শত বছরের স্মৃতিবিজড়িত ভিটেমাটি। ভাটির টানে গত কয়েক দিনে কয়েক একর জমি বিষখালী নদীতে হারিয়ে গেছে। এ ভাঙনে ইতোমধ্যে সুন্দর গ্রাম এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।
মানকি গ্রামের বাসিন্দা হৃদয়, সোহাগ ও সজল জানান, সুন্দর গ্রামটি এখন কেবল নামেই টিকে আছে। বাড়িঘর, বিদ্যালয়, ফসলের জমি সবই নদীতে তলিয়ে গেছে। মাত্র একটি বাড়ি এখন গ্রামের অস্তিত্বের শেষ চিহ্ন। নাপিতেরহাট ফকিরবাড়ি এলাকার অনেক পরিবার ইতোমধ্যেই গৃহহীন হয়ে আত্মীয়স্বজনদের বাড়ি বা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। খালেক হাওলাদার বলেন, নদীভাঙনে শত শত পরিবার এখন দিশেহারা। কাজ নেই, জমি নেই, ঘরও নেই কারো কারো।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খরস্রোতা বিষখালী নদীর ভাটির টানে প্রতিদিন নতুন এলাকা ভাঙছে। অথচ কার্যকর কোনো প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই। রাকিব ও আকাশ হাওলাদার বলেন, ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারি না। যেকোনো সময় আমাদের ভিটেমাটি ও ঘর নদীতে চলে যেতে পারে। মানকি গ্রামের ইকবাল হোসেন নয়ন জানান, মানকি লঞ্চঘাটের রাস্তায় হঠাৎ ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে রাস্তা ও ঘাট উভয়ই হারিয়ে যাবে। এলাকার শিপন খলিফা অভিযোগ করেন, নদীর পাড়ের মাটি ইটভাটায় কেটে নেয়ার কারণেই নদীতে এমন ভাঙন হয়েছে। তিনি বলেন, মাটি কাটা বন্ধ না হলে এ ভাঙন ঠেকানো যাবে না।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, দ্রুত নদী রক্ষা প্রকল্প গ্রহণ না করলে মানকি ও সুন্দর গ্রাম দুইটি অচিরেই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। দীর্ঘদিন ধরে তারা জিও ব্যাগ ফেলা, অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে আসছেন। ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সরকারের কাছে চাহিদা পাঠানো হবে। যত দ্রুত সম্ভব জিও ব্যাগ ফেলে ও বাঁধ পুনর্নির্মাণ করে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিফাত আরা মৌরি জানান, ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। একই সাথে নদীর পাড় থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়েও আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে। স্থানীয়দের দাবি, অবিলম্বে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও নদী তীর সংরক্ষণের কার্যকর উদ্যোগ না নিলে রাজাপুরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গ্রামগুলো অচিরেই বিষখালী নদীতে হারিয়ে যাবে।



