জাহাঙ্গীর আলম হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)
শহর কিংবা গ্রাম, সবখানেই এখন ফসলি জমির সঙ্কট। যে কারণে মানুষের ছাদকৃষিতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এক সময় বাড়ির ছাদ মানেই ছিল কাপড় শুকানোর জায়গা; কিন্তু কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে সেই ছাদ আজ কৃষির নতুন সম্ভাবনায় ভরপুর। ফুল, ফল, শাকসবজির পাশাপাশি এখন বস্তায় আদা ও হলুদ চাষই হয়ে উঠেছে কৃষকদের আয়ের নতুন জানালা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ছাদকে উৎপাদনমুখী সম্পদে রূপান্তরের ফলে পরিবারে পুষ্টি সরবরাহ যেমন নিশ্চিত হচ্ছে, তেমনি বাড়তি আয়ের পথও খুলছে। ছাদের সবুজ গাছপালা ভবনের অতিরিক্ত তাপ শোষণের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ কমাতেও ভূমিকা রাখছে। কম শ্রম, কম খরচ, ফলনও তাজা ও নিরাপদ। সব মিলিয়ে ছাদকৃষি এখন হোসেনপুরে এক নিঃশব্দ সবুজ বিপ্লব। এই বিপ্লবের অগ্রযাত্রায় আলোচনায় রয়েছেন উপজেলার রামপুর এলাকার তরুণ উদ্যোক্তা রাজীব মিয়া। তার বাড়ির ছাদে সাজানো কৃষিবাগান দেখলে বোঝার উপায় নেই, এটা কোনো সাধারণ বাসা বাড়ি। বস্তায় আদা-হলুদ চাষের পাশাপাশি তিনি গড়ে তুলেছেন পেয়ারা, লেবু, বিভিন্ন ফলদ ও ওষুধি গাছের সমাহার। রাজীব জানান, প্রথম দিকে তিনি নিজের শখ এবং পরিবারের চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে ছাদে চাষ শুরু করেন। পরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে পদ্ধতিগতভাবে বস্তায় আদা ও হলুদ চাষে মনোনিবেশ করেন। ‘ছাদে বস্তায় চাষ করলে কন্দ পচা রোগ কম হয়, পরিচর্যাও সহজ। খরচ কম, কিন্তু লাভ বেশি।
তার ছাদে বর্তমানে রয়েছে ১১০ বস্তায় আদা, ৩৫ বস্তায় হলুদ এবং ৪৫ বস্তায় বিভিন্ন গাছের চারা। এ পর্যন্ত মোট প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছেন তিনি। রাজীবের আশা, ভাগ্য অনুকূলে থাকলে দ্বিগুণেরও বেশি লাভ হবে এই মওসুমে।শুধু নিজে কৃষিতে সফল হয়েছেন তা-ই নয়, প্রতিবেশীদেরও ছাদকৃষিতে উদ্বুদ্ধ করতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন এই তরুণ। তার লক্ষ্য, ‘প্রতিটি বাড়ির পতিত ছাদ হোক উৎপাদনমুখী; পরিবার হোক স্বনির্ভর।’ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলীমুল শাহান বলেন, ‘রাজীব ছাদকৃষিতে সফলতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রেখে আরো কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। এখন অনেকেই তার পথ অনুসরণ করছেন।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ কে এম শাহজাহান কবির জানান, হোসেনপুরে ছাদকৃষির বিস্তার এখন চোখে পড়ার মতো। শহর থেকে গ্রাম, সবখানেই এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
‘এভাবে পতিত জায়গা কাজে লাগলে পরিবারে সবজি ও পুষ্টির চাহিদা যেমন পূরণ হবে, তেমনি অতিরিক্ত আয় করে স্বনির্ভর হওয়াও সম্ভব। পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায়ও তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
রাজীবের মতো তরুণরা দেখিয়ে দিচ্ছে, স্বপ্ন যদি আকাশে গড়া যায়, তবে সেই ছাদই হতে পারে কৃষির নতুন দুয়ার।



