নির্বাচনী জোট নয় সমঝোতা করবে জামায়াত : ডা: শফিক

Printed Edition

আবদুল কাদের তাপাদার সিলেট

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। দ্রুত নির্বাচন না হলে দেশে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে। তবে এর আগে গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশ নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন জামায়াতের শ্রেষ্ঠ দাবি। তাই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সাধারণ মানুষ সমর্থন দেবে বলে বিশ্বাস করি।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে জামায়াত কোনো জোট গঠন করবে না, তবে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তির সাথে নির্বাচনী সমঝোতা করবে। আর এই সমঝোতার স্বার্থে জামায়াত ঘোষিত সংসদ সদস্য প্রার্থী তালিকায়ও অনেক পরিবর্তন আসতে পারে। তিনি বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি সকাল সোয়া ৮টায় ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে ওসমানী এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছান। এরপর সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন।

ওসমানী বিমানবন্দরে পৌঁছামাত্রই সিলেট জামায়াতের পক্ষ থেকে আমিরে জামায়াতকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়।

সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় শেষে কয়েক সহস্রাধিক মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় তাকে সিলেট নগরীতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় এয়ারপোর্ট থেকে চার কিলোমিটার-জুড়ে রাস্তার দু’পাশে শত শত মানুষ হাত নেড়ে তাকে স্বাগত জানান। টানা বিদেশ সফর শেষে তিনি মঙ্গলবার দেশে ফিরেছেন। আর দেশে ফিরেই দু’দিনের সাংগঠনিক সফরে তিনি সিলেটে আসলেন। বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তিনি সিলেট জেলার সব ক’টি আসনের নেতাকর্মীদের সাথে পৃথক মতবিনিময় সভায় মিলিত হবেন।

আমিরে জামায়াত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে বলেন, গত দেড় দশকে দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। এবার হবে তাৎপর্যপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে, ইনশাআল্লাহ।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসবে কি না- প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, আওয়ামী লীগই তো নির্বাচন চায় না। তারা তো গত দেড় দশক সুযোগ পেয়েও নির্বাচন না করে জোর করে নির্বাচনের নামে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল। এ দেশের কোটি কোটি তরুণ গত ১৫ বছর ভোট দিতে পারেনি। জনগণ আওয়ামী লীগের মতো দলকে নির্বাচনে মেনে নেবে না।

সিলেটের যোগাযোগ বিড়ম্বনা নিয়েও এ সময় কথা বলেন জামায়াত আমির। তিনি বলেন, আমাদের সিলেটের নানা সমস্যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিশেষ করে ঢাকার সাথে সড়ক যোগাযোগ এখন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থা নিয়ে সিলেটবাসীর চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। এটি দ্রুত সমাধানের জন্য জামায়াতের প্রতিনিধিদল সড়ক ও যোগাযোগ উপদেষ্টার সাথে দেখা করেছে। তারা এই সমস্যার দ্রুত সমাধান চেয়েছেন। এ ছাড়া সিলেটের নানা সমস্যা নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। সিলেটের অধিকারের প্রশ্নে আমরা কখনো পিছিয়ে থাকব না।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, সিলেট জেলা আমির ও সিলেট-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা হাবিবুর রহমান, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক হাফেজ মাওলানা আবদুল হাই হারুন, সিলেট জেলা নায়েবে আমির ও সিলেট-২ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অধ্যাপক আবদুল হান্নান, জেলা নায়েবে আমির ও সিলেট-৫ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হাফেজ মাওলানা আনোয়ার হোসাইন খান, সিলেট মহানগর নায়েবে আমির ড. নূরুল ইসলাম বাবুল, জেলা সেক্রেটারি ও সিলেট-৪ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী, সাবেক জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, মহানগর সেক্রেটারি ও হবিগঞ্জ-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান আলী, সিলেট-৩ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমেদ, সুনামগঞ্জ-৫ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী শায়েখ মাওলানা আবদুস সালাম আল মাদানী, সিলেট মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী ও মৌলভীবাজার-৪ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবদুর রব, মহানগর সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী ও মাওলানা ইসলাম উদ্দিন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সিলেট মহানগর সভাপতি শাহীন আহমেদ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি তারেক মনোয়ার, সিলেট জেলা পূর্ব শিবিরের সভাপতি আবু আইয়ুব মঞ্জু, জেলা পশ্চিমের সভাপতি আবু জুবায়ের প্রমুখ।

২ সদস্যের কমিটি গঠন জামায়াতের

নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, নির্বাচনী কাঠামো, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের বিষয়ে একটি ‘সমঝোতামূলক রূপরেখা’ তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএনপিকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানানোর পর এ কমিটি গঠন করল দলটি।

গত ৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জামায়াত আমির ডা: শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর আলোচনার পর জামায়াত আমির এ কমিটি গঠন করেন। কমিটির সদস্যরা হলেন- সংগঠনের নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো: তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি ড. হামিদুর রহমান আযাদ।

রাজশাহীতে অধ্যাপক মুজিবুর

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, দেশে ইসলামী আইন চালু হলে কারো অধিকার নিয়ে আর আন্দোলন করতে হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির, সাবেক এমপি ও রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে জামায়াত মনোনীত এমপি পদপ্রার্থী অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। বুধবার বিকেলে রাজশাহীর তানোর উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তানোর পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড সভাপতি মাওলানা আফজাল হোসাইনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাহবুব চৌধুরীর সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি গোলাম মুর্তজা, জেলা কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যাপক জামিল রহমান ও মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, তানোর উপজেলা আমির মাওলানা আলমগীর হোসেন, সেক্রেটারি ডি এম আক্কাস আলী, উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুর রহিম, শ্রমিক নেতা আবদুল কাদেরসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ।