সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি

আসামি গ্রেফতারের পরও পাহাড়ে কেন এই অরাজকতা

Printed Edition

নিজস্ব প্রতিবেদক

  • পলাতক ফ্যাসিস্টরা চুপ করে বসে থাকবে না
  • বৈষম্যবিরোধী মামলায় নির্দোষরা আবেদন করুন

বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, পাহাড়ে একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যা অবশ্যই অনাকাক্সিক্ষত। ঘটনার এক ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করেছে। জড়িত অপর দুইজনকে শনাক্ত করে গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে। তার পরও কিসের জন্য এই অরাজকতা? তিনি বলেন, পলাতক ফ্যাসিস্টরা চুপ করে বসে থাকবে এটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। তাই সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে প্রস্তুত রয়েছে পুলিশ।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পুলিশ থানা ছেড়ে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে এক বছরে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে আসা একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু আমরা চাচ্ছি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা অর্জন করতে। আমাদের বিশ্বাস আমরা পারব। তিনি বলেন, আমি তো কোনো শক্তির কথা নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না। যারা পরাজিত, ফ্যাসিস্ট তারাই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। তাদের নেতাকর্মী ও সাপোর্টাররাও আমাদের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

আইজিপি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তিকে মোকাবেলা করতে প্রস্তুত হচ্ছে পুলিশ বাহিনীর দেড় লাখ সদস্য। এ জন্য তাদের দেয়া হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ ও নানা ধরনের ডিভাইস। তারা যে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত থাকবে। এমনকি পরাজিত শক্তির কোনো দোসর বাহিনীর ভেতর থেকে কোনো ধরনের উসকানি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা বা এর সাথে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ১৩৫০টি অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। আমরা নিয়মিত অস্ত্র উদ্ধার করছি। যদি জানতাম অস্ত্র কার হাতে তাহলে তো কথাই ছিল না। কিন্তু সবাইকে সন্দেহের তালিকায় রাখছি। আমরা ধারণা করছি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে যেতে পারে, কিছু পাহাড়ি কিংবা আরসার হাতে যেতে পারে। সব কিছু মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি।

নির্বাচন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, আপনারা যত যা-ই বলেন আমরা সক্ষম। আমরা এক লাখ ৫০ হাজার পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। গত নির্বাচনে ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার। আগে কখনো একই সাথে এত পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়নি। তাদের নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ, ভোটিং, নির্বাচন কেন্দ্রের বিধিবিধান শেখানো হবে। হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। নির্বাচনী দায়িত্ব দেয়ার আগে প্রত্যেকের বিষয়ে খোঁজ নেয়া হবে। যদি কাউকে মনে হয় তাকে দায়িত্ব দেয়া ঠিক হবে না, দেবো না।

তিনি আরো বলেন, আমরা গত জুন মাস থেকে পেশাদারিত্ব, নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা- এই তিনটি বিষয় সামনে রেখে অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ব্যবস্থায় একটি মডিউল তৈরি করে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে এই মাসের ৭ তারিখ থেকে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তিন ধাপে চলবে এই প্রশিক্ষণ।

এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, মোহাম্মদপুর আদাবরে বিপুল সংখ্যক অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের অনেকেই জামিনে বেরিয়ে এসে বিপুল উৎসাহে আবার অপরাধ করছে। আমরা তাদের আটকাতে নানাভাবে চেষ্টা করছি। আমরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিন্তা করছি নিবর্তনমূলক আটকাদেশ দিতে।

বাহারুল আলম বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের হওয়া এক হাজার ৭৬০ মামলার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫৫টিতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। এর বাইরে বাকি সব মামলাই এখনো তদন্তাধীন। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩-এ ধারা অনুযায়ী, ইতোমধ্যে ১৩৬ জনকে অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিয়েছে আদালত। পুলিশের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসব আসামিকে নির্দোষ বলে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আরো ২৩৬ জনের আবেদন পুলিশ বিবেচনা করছে।

আইজিপি বলেন, চার্জশিট দিতে দীর্ঘ সময় লাগে। তাই নিরীহ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য এই বিধান রাখা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আইনত আমাদের যাচাই-বাছাই করার কোনো সুযোগ নেই। আইন আমাদেরকে সেই অধিকার দেয়নি, তবে বর্তমান সরকার সিআরপিসির কিছু সংশোধন চেষ্টা করছে। যেখানে মামলার আগে যাচাই-বাছাই করার ক্ষমতা দেয়া যায় কি না সেটা দেখা হচ্ছে।

মামলা বাণিজ্য ও হয়রানির ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে আইজিপি বলেন, স্পেসিফিক্যালি পুলিশের লোক যদি জড়িত থাকে, থাকতে পারে। আমি অস্বীকার করি না। ভালো মন্দ মিলেই তো আমরা সবাই। আমরা সবাই ফেরেশতা না। অবশ্যই আমার নলেজে যদি কোনোভাবে আসে আমরা এটির বিরুদ্ধে একেবারে যথাসম্ভব শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। এমনিতে সাধারণ লোকের করা মামলাতেই মানুষ অতিষ্ঠ। সেখানে পুলিশও যদি এই দলে ঢুকে যায় তা হলে মানুষ যাবে কোথায়?

আইজিপি বলেন, বৈষম্যবিরোধী মামলায় যারা নিজেদের নির্দোষ মনে করেন তারা সংশ্লিষ্ট এসপির কাছে আবেদন করবেন। আমরা তাদের এই কেসগুলো ১৭৩ এর-এ অনুযায়ী বিবেচনা করে আদালতে পাঠিয়ে দেবো। যাতে তারা এই মুহূর্ত থেকেই এই হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।