‘আওয়ামী শাসনে আলেম নিপীড়ন’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

ভারত হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে আলেমদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে : মাহমুদুর রহমান

Printed Edition

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমার দেশ পত্রিকার সাংবাদিক রকীবুল হকের লেখা ‘আওয়ামী শাসনে আলেম নিপীড়ন’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। গতকাল আমার দেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে পত্রিকাটির সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান এ মোড়ক উন্মোচন করেন।

মাহমুদুর রহমান বলেন, নাইন-ইলেভেনের পর সারা বিশ্বে ইসলামফোবিয়ার যে ব্যাপক প্রসার হয়েছিল এরই সুযোগ নেয় প্রতিবেশী দেশ ভারত। তারা তাদের দালাল সরকার বাংলাদেশের মসনদে বসিয়ে আলেম সমাজ ও দেশপ্রেমিকদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছিল।

তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ আমলে দেশের আলেম সমাজকে বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে নির্যাতনের ঘটনা অনেক আগেই শুরু হয়েছিল। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশে উগ্রবাদের উত্থান হওয়ার বিষয়টি ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানো হয় এবং আলেমদেরকে ট্যাগ দেয়া শুরু করে। ভারত তার দালাল হাসিনা সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়ে আলেম সমাজের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে।

আমার দেশ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে দেশের ভেতরে ও বাইরে থেকে। বিগত ১৫ বছরে যারা ফ্যাসিবাদ শাসনে আলেম সমাজের ওপর জুলুম, নির্যাতন করেছিল তাদেরকে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে সবসময় ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। মাহমুদুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে এটিই স্বাভাবিক, তবে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ইসলামের বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি তা হলে যত ষড়যন্ত্রই করা হোক না কেন ফ্যাসিবাদ ফিরে আসা সম্ভব নয়।

প্রকাশিত বইকে এক প্রামাণ্য ঐতিহাসিক দলিল উল্লেখ করে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আমার দেশ পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পর আমার দেশ পুনঃপ্রকাশের শুরুতেই সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের পরিকল্পনায় সহকর্মী রকীবুল হক মাঠপর্যায় থেকে আলেম নির্যাতনের ঘটনা ধারাবাহিকভাবে পত্রিকায় তুলে ধরেন। ভবিষ্যতে নির্যাতনের আরো কাহিনী তুলে ধরা হবে। তিনি সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও বইয়ের লেখক রকীবুল হককে ধন্যবাদ জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় নির্যাতিত আলেম ও জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদ আমলে নির্যাতনের মাত্রা এতই বিস্তৃত ছিল যে, হয়তো অনেক ঘটনাই এখনো আমাদের অজানা। এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা ধারাবাহিকভাবে আরো প্রকাশের অনুরোধ জানান তিনি। এ ছাড়া আর যাতে এ ধরনের ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসতে পারে সে ব্যাপারে তিনি দলমত নির্বিশেষে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

নির্যাতিত আলেম মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানী বলেন, শেখ হাসিনাকে লেডি আবু জাহেল, লেডি ফেরাউন-বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করা যায়। তার অন্যতম কৌশল ছিল অপপ্রচারের মাধ্যমে আলেমদের বিতর্কিত করা। দেশ ও ইসলামের পক্ষে যারাই ছিলেন তাদেরকে গ্রেফতার-নির্যাতন করা হয়।

প্রকাশিত বইকে ঐতিহাসিক ও জাতীয় সচেতনা, দেশাত্মবোধক ও ঈমানি চেতনার সুন্দর দলিল বলে আখ্যায়িত করে মুফতি কাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব এবং আর কখনো এ ধরনের আলেম নির্যাতনের সুযোগ দেবো না।

ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী বলেন, রাষ্ট্র এখনো ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। আজও আতঙ্কে রাত কাটে আমাদের। এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এবং মাথা চাড়া দিচ্ছে। তাদের শেকড় প্রতিবেশী দেশ ভারতে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদ রুখতে হবে।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী প্রকাশিত বইকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আর যাতে কখনো ফ্যাসিবাদ ফিরতে না পারে সে জন্য সবাইকে ঐক্যবব্ধ থাকতে হবে।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, বইয়ের লেখক আমার দেশ পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার রকীবুল হক এবং বইয়ের প্রকাশক ও তাজদিদ পাবলিকেশনের স্বত্বাধিকারী আহমেদ রিফআত। এ ছাড়াও আমার দেশের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরী, সহযোগী সম্পাদক আলফাজ আনাম, বার্তা সম্পাদক ইলিয়াস হোসেন, ডেপুটি চিফ রিপোর্টার বাছির জামালসহ আমার দেশ পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও আমন্ত্রিতরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ফ্যাসিবাদ পতন-পরবর্তী আমার দেশ পুনঃপ্রকাশের শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হয় নির্যাতিত আলেমদের কথা। সেসব প্রতিবেদন নিয়ে বই প্রকাশ করেছে তাজদিদ পাবলিকেশন। ২২৪ পৃষ্ঠার বইটি রকমারিডটকমসহ বিভিন্ন লাইব্রেরিতে পাওয়া যাচ্ছে।