নিজস্ব প্রতিবেদক
এস আলম গ্রুপের পক্ষ থেকে গত ২৭ জুলাই নয়া দিগন্তে প্রকাশিত ‘আ’লীগকে ফেরাতে নীলনকশা- এস আলমের সাথে দিল্লিতে হাসিনার একাধিক গোপন মিটিং, প্রাথমিকভাবে আড়াই হাজার কোটি টাকা হস্তান্তর’ শীর্ষক খবরের প্রতিবাদ করে দেয়া এক আইনি নোটিশে দাবি করা হয়েছে- এই খবর প্রকাশ হওয়ায় তার প্রতিষ্ঠানের এক লাখ কোটি টাকার সম্মানহানি ও ক্ষতি হয়েছে। এ নোটিশে দাবি করা হয়েছে, প্রতিবেদনের প্রকাশিত তথ্য মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক। এতে অবশ্য প্রতিবেদনে উল্লেখিত সময়ের কোন দিন এস আলম কোথায় ছিলেন সেটি উল্লেখ করেননি।
নোটিশে বলা হয়েছে, ১৯৮৫ সাল থেকে এস আলম সুনামের সাথে ব্যবসা করে দুই লাখ লোককে কর্মসংস্থান এবং লাখ কোটি টাকার অধিক বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু এই লাখ কোটি টাকা এই উদ্যোক্তা কোথায় পেলেন, আর লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে গিয়ে কোন ব্যাংকের কাছ থেকে কত টাকা ঋণ নিয়েছেন তার উল্লেখ নেই লিগ্যাল নোটিশে। এই নোটিশে খবর প্রকাশে এস আলম গ্রুপের লাখ কোটি টাকা ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। যার অর্থ হলো- এক সংবাদ প্রতিবেদনে লাখ কোটি ক্ষতি হলে তিনি বহু লাখ কোটি টাকার মালিক। এই মালিকানা তিনি কোথায় পেলেন, এ বিপুল অর্থবিত্তের মালিক হতে গিয়ে তিনি যে ব্যবসা করেছেন তাতে কত টাকা সরকারকে কর দিয়েছেন, তাও উল্লেখ করেননি।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, এস আলম গ্রুপ কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সাথে সরাসরি জড়িত নয় এবং এই গ্রুপ আওয়ামী লীগ আমলে গঠিত হয়নি। কিন্তু তিনি ইসলামী ব্যাংকসহ ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লাখ লাখ কোটি টাকার তহবিল কোন আমলে বের করে নিয়েছেন তা নোটিশে উল্লেখ করা হয়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের আংশিক অনুসন্ধান অনুসারে ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে এস আলম নামে-বেনামে দুই লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছেন। এই অর্থ তিনি কোনো ব্যাংককেই ফেরত দিচ্ছেন না। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো টিকে থাকার লড়াইয়ে রয়েছে। এর আমানতকারীরা তাদের জমা রাখা টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। এর মধ্যে শুধু ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলমের নামে-বেনামে নেয়া এক লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকার পুরোটাই কুঋণে পরিণত হয়েছে। তার নিয়ন্ত্রিত অন্য ব্যাংকগুলোর অবস্থা আরো শোচনীয়। এর মধ্যে পাঁচটি ব্যাংককে কোনোভাবে টিকিয়ে রাখতে সরকার একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর কোনোটাই এস আলম গ্রুপের পক্ষে দেয়া লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করা হয়নি।
এস আলম গ্রুপের ব্যাংকে রাখা সাধারণ মানুষের আমানতের লাখ লাখ কোটি টাকা লুটপাট নিয়ে এবং সেই লুটপাটের চিত্র ঢেকে রেখে নতুন উদ্যমে অপকর্ম বজায় রাখতে পতিত স্বৈরাচারের শীর্ষ ব্যক্তিদের সাথে মিটিং করার খবরাখবরসংবলিত প্রতিবেদন প্রকাশকে লিগ্যাল নোটিশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুসন্ধানে ১১টি ব্যাংক থেকে সোয়া দুই লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া এস আলম গ্রুপের জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ কি না সেটি নোটিশে উল্লেখ করা হয়নি।



