টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনে নির্বাচনী হাওয়া

বিজয়ী হতে মরিয়া বিএনপির একাধিক জামায়াতের একক প্রার্থী

Printed Edition
বিজয়ী হতে মরিয়া বিএনপির একাধিক জামায়াতের একক প্রার্থী
বিজয়ী হতে মরিয়া বিএনপির একাধিক জামায়াতের একক প্রার্থী

মো: তারিকুল ইসলাম নাগরপুর (টাঙ্গাইল)

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উৎসব মুখর হয়ে উঠেছে টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ার) আসনের রাজনৈতিক অঙ্গন। সকাল, বিকেল, সন্ধ্যায়- বাজারে, চায়ের দোকানে, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে, হাট বাজারে ও রাস্তার মোড়ে সব জায়গায় এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে।

দুই উপজেলায় গ্রামগঞ্জে প্রতিদিনই চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের শোডাউন, গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রায় দুই ডজন থাকলেও দলীয়ভাবে এখনো চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি। ফলে বিএনপির ভেতরে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

অপর দিকে এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী ঘোষণা দেয়ায় নিজেদের মধ্যে কোন প্রতিযোগিতা নেই। সবাই একজন প্রার্থীর জন্য মাঠে নেমে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিএনপির একাধিক প্রার্থীর ভিড়ে জামায়াত একক প্রার্থী হিসেবে বেশ সংগঠিত।

টাঙ্গাইল-৬ আসনটি নাগরপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও দেলদুয়ার উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন-১৩৫। এ দুই উপজেলায় মোট ভোটার চার লাখ ৪৭ হাজার ৮১৫ জন। এরমধ্যে নাগরপুরে ভোটার দুই লাখ ৬৩ হাজার ৫৭ জন, আর দেলদুয়ারে এক লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৮ জন। পুরুষ ভোটার দুই লাখ ২৬ হাজার ৬৫৬ জন, মহিলা ভোটার দুই লাখ ২১ হাজার ১৫২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের সাতজন ভোটার রয়েছেন।

নাগরপুর উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল-৬ আসনে ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার শওকত আলী নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালে বিএনপি থেকে নূর মোহাম্মদ খান ও খন্দকার আবু তাহের বিজয়ী হন। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে নূর মোহাম্মদ খান টানা দুইবার জয় পান। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির খন্দকার আবু তাহের ও অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পান বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আব্দুল বাতেন। পরবর্তী ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে যথাক্রমে খন্দকার আব্দুল বাতেন ও আহসানুল ইসলাম টিটু বিজয়ী হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আহসানুল ইসলাম টিটু দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

নির্বাচনী তথ্যমতে, ১৯৯৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাবেক মন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তিনি ২০২২ সালে পরলোকগমন করেন। সাবেক মন্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে অনেকেই দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। এরা হলেন- বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নূর মুহাম্মদ খান, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক ছাত্রদল-যুবদল নেতা মো: রবিউল আওয়াল লাভলু, নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ ছালাম, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো: শরিফ উদ্দিন আরজু, উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মো: শরীফুল ইসলাম স্বপন, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হল শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, জেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট আলী ইমাম তপন, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য মীর আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডভোকেট মো: ইকবাল হোসেন খান, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা রাজীব আহমেদ, যুক্তরাজ্যের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (অব:) ডি এম গোলাম ফারুক, টাঙ্গাইল জেলা জিয়া পরিষদের সহসভাপতি মো: শামীম চৌধুরী (বাবু), যুক্তরাজ্য প্রবাসী সমাজসেবক মো: মাইনুল আলম খান কনক ও সাবেক মন্ত্রী গৌতম চক্রবর্তীর স্ত্রী দিপালী চক্রবর্তী। অপরদিকে দেলদুয়ার উপজেলা থেকে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এম ফেরদৌস হোসেন, উপজেলা স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ড. জি এম শফি, উপজেলা সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: আনিসুর রহমান, বিএনপি নেতা মো: জুয়েল সরকার, টাঙ্গাইল সরকারি সা’দত কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী আরিফুল হক আরিফ সম্ভব্য প্রার্থী হিসেবে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী।

স্থানীয় অনেকেই জানান, গণসংযোগের দৌড়ে এগিয়ে আছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও পরিশ্রমী নেতা রবিউল আওয়াল লাভলু। তিনি তৃণমূলের কর্মীদের সাথে নিয়ে মাঠে ভোটের আমেজ সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। জনগণ যদি চান, ইনশাআল্লাহ আমি ধানের শীষ প্রতীকে মাঠে থাকবো।’ এদিকে দলের আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী নূর মুহাম্মদ খান মনোনয়ন প্রত্যাশী। নাগরপুর ও দেলদুয়ার উপজেলায় তারও ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

অন্যদিকে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জন্যে সংঘটিত ও নীরবভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন জামায়াতের একক প্রার্থী। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অনেক আগেই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। দলটির প্রার্থী ধলেশ্বরী হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা: এ কে এম আবদুল হামিদ নির্বাচনী মাঠে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি বলেন, জনগণ আমাকে নির্বাচিত করলে ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখবো ইনশাল্লাহ।

এই আসনে আরো যারা প্রার্থী তারা হলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো: আখিনুর মিয়া, গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার কবির হোসেন, খেলাফত মজলিসের আব্দুল মান্নান শেখ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ওয়াহেদুজ্জামান সুমন এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আব্দুল করিম। তারাও নির্বাচনী মাঠে বেশ তৎপর রয়েছেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ আসনে অন্য দলগুলোর মধ্যে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও বিএনপির একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন। যার ফলে নির্বাচনকালীন সময়ে যদি অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হয় তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য দলের প্রার্থীরা বিশেষ করে একক প্রার্থী নিয়ে মাঠে থাকা জামায়াতে ইসলামী সুবিধাজনক অবস্থায় চলে যেতে পারে।