বরিশাল নগরীর খালে প্রাণ ফিরছে

পরিদর্শনে মুগ্ধ নৌ উপদেষ্টা

Printed Edition

খালিদ সাইফুল্লাহ, বরিশাল ব্যুরো

বরিশাল নগরীর দীর্ঘ দিনের অবহেলায় দখল ও জঞ্জালে ভরাট হওয়া খালগুলো অবশেষে জেগে উঠছে। গত শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) সাখাওয়াত হোসেন হারিয়ে যাওয়া খালগুলো প্রাণ ফিরে পাওয়ায় পরিদর্শনকালে দীর্ঘ সময় খালের তীরে অবস্থান করেন। এ সময় খালগুলোর সৌন্দর্য বর্ধনে নগর ও জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেন। সিটি করপোরেশন সম্প্রতি ১১টি খালের প্রায় ৪৩ কিলোমিটার এলাকা এবং প্রায় সাড়ে তিন একর খাসজমি অবৈধ দখলমুক্ত করেছে। সেই সাথে বর্ষা মৌসুমে ড্রেনগুলো পরিষ্কার ও জঞ্জালমুক্ত রাখতে ধারাবাহিক পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়। ফলে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতের পরেও এবার নগরবাসীর দুর্ভোগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে ছিল।

নগরীর অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে খাল দখল করে রেখেছিল। অপসোনিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি তাদের ভবনের ভেতর প্রায় এক হাজার ফুট খাল দখল করে রেখেছিল গত প্রায় ৫০ বছর যাবৎ। এসব কারণে খালের অস্তিত্ব নগরবাসীর অনেকের কাছেই হারিয়ে গিয়েছিল। জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই দখলমুক্তকরণ ও খাল সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেন। পরবর্তীতে বিভাগীয় কমিশনার ও সিটি প্রশাসক মো: রায়হান কাওসার দায়িত্ব নেয়ার পর আরো গতি পায় অভিযান। সীমানা চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে ধাপে ধাপে খাল ও ড্রেনগুলো তাদের মূল অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।

এরইমধ্যে ১১টি খালের প্রায় ৪৩ কিলোমিটার অংশ সম্পূর্ণ জঞ্জালমুক্ত করা হয়েছে। অনেক জায়গায় দীর্ঘ দিন হারিয়ে যাওয়া নৌকাও এখন আবার চলাচল করছে।

পরিসংখ্যান বলছে, বরিশাল নগরীতে মোট ৪৬টি খাল রয়েছে। এর বাইরে সিটি করপোরেশনের অধীনে রয়েছে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার সড়ক এবং ১৬০ কিলোমিটার ড্রেন। তবে সুষ্ঠ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্য আরো অন্তত ৮০০ কিলোমিটার পাকা ড্রেন নির্মাণ ও অনেক ড্রেনের পুনর্বাসন জরুরি হয়ে পড়েছে।

বিশেষ করে নবগ্রাম রোডের বটতলা বাজার থেকে সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ পর্যন্ত ১০ ফুট প্রস্থের আরসিসি ড্রেনটি ইট, বালু ও কংক্রিটের জঞ্জালে ভরাট হয়ে আছে। এতে নগরীর অন্যতম ব্যস্ত এই সড়কটিতে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। আশপাশের বহুতল ভবন নির্মাণকালে ড্রেনের জায়গা ব্যবহার করায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়েছে।

তবুও এ বছর রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাতের (জুলাই মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি) পরও বরিশাল নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অতীতের তুলনায় অনেক ভালো ছিল। নগরবাসীর ধারণা, এটি সম্ভব হয়েছে জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের যৌথ উদ্যোগে নেয়া বিশেষ কর্মসূচির কারণে।

এ দিকে নগরীর দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) এখন পরিকল্পনা কমিশনের চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। এতে ২৯টি খাল পুনঃখনন ও সংস্কারের পাশাপাশি উভয় পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলে নয়া দিগন্তকে জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন। এ দিকে অনুমোদন মিললে হারিয়ে যাওয়া খালগুলো আবারো নগরীর প্রাণ ফিরিয়ে আনবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন ও সিটি প্রশাসক মো: রায়হান কাওসার।

গত শনিবার দুপুরে নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) সাখাওয়াত হোসেন নগরীর জেল খাল ও লাকুটিয়া খাল দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এ সময় জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন ও বিভাগীয় কমিশনার (সিটি প্রশাসক) মো: রায়হান কাওসার এবং বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানসহ অনান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।