২০তম ব্যাচের অফিসারদের পদোন্নতি : দীর্ঘ দিনের ঝুলন্ত বিড়ম্বনা

রাজনৈতিক কারণে যোগ্য কর্মকর্তা বঞ্চিত, প্রশাসনে গতি কমছে

Printed Edition

বিশেষ সংবাদদাতা

প্রশাসনের উচ্চপদে পদায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন ধরে চলমান সমস্যার অন্যতম কারণ হচ্ছে উপযুক্ত কর্মকর্তার অভাব। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনেক অনুবিভাগে পদ খালি থাকায় গুরুত্বপূর্ণ পদ যেমন চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক ও ডিজি পদে পদায়ন করা যায় না। এ পদগুলো পূরণের জন্য অন্তত শতাধিক অতিরিক্ত সচিব প্রয়োজন। তবে নানা কারণে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমেও প্রত্যাশিত গতিশীলতা দেখা যাচ্ছে না।

এই বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিব ও উপসচিব পদে পদোন্নতি অনেকদিন ধরে ঝুলে আছে। প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও এসএসবির সভা করে যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার নিকট পাঠানো হচ্ছে না।

২০তম ব্যাচে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে ৩০০ জন কর্মকর্তা নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তাদের অধিকাংশ ২০০১ সালের ২৮ মে যোগদান করেন। প্রথম পদোন্নতি হিসেবে তারা ২০০৬ সালের ১৫ অক্টোবর সিনিয়র সহকারী সচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে পদোন্নতি বাস্তবায়িত হয়নি।

বিগত ২০১৩ সালের শেষের দিকে ব্যাচের প্রথম দিকের ১২০ জনকে উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করা হয়। তবে ব্যাচের শেষ দিকের কিছু অফিসারের তৎপরতার কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। একই সময়ে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্যও প্রস্তুতি নেয়া হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জিও জারি হয়; কিন্তু উপসচিব পদে পদোন্নতি আর করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল ব্যাচের বেশির ভাগ অফিসার উপসচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন।

উপসচিব পদে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কাজ করার পর যুগ্ম সচিব পদ পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে ছয় বছর কাজের পর ২০২১ সালের ২৯ অক্টোবর ব্যাচের দুই-তৃতীয়াংশ অফিসার যুগ্ম সচিব হন। ২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর দুই বছর পূর্ণ হওয়ায় তারা অতিরিক্ত সচিব পদে যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। তবুও নানা কারণে পদোন্নতি দীর্ঘ দিন ঝুলে আছে।

রাজনৈতিক কারণে কিছু কর্মকর্তাকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর তারা প্রথমে উপসচিব ও পরে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পান এবং মূল ব্যাচের সাথে তাদের জ্যেষ্ঠতা নিশ্চিত করা হয়। তা ছাড়া কিছু দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা পদোন্নতি বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন।

এ ব্যাচের মধ্যে এমন অনেক কর্মকর্তা আছেন যারা দুর্নীতিতে জড়িত নয়। তারা ডিসি হননি, মন্ত্রীর পিএস বা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক বা মহাপরিচালক পদে চেষ্টাও করেননি। বিদেশী মিশনে পদায়নের জন্য তৎপর হয়নি। তারা সর্বদা পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।

দেশের স্বার্থে সৎ ও যোগ্য সব কর্মকর্তাকে, যাদের মধ্যে রাজনৈতিক কারণে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হয়েছে, দ্রুত অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে যথোপযুক্ত পদে পদায়ন করা এখন সময়ের দাবি।