দীর্ঘদিন পর গাজায় একসাথে জুমার নামাজ

Printed Edition
গাজার খান ইউনুস একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের মধ্যে জুমার নামাজের জন্য জড়ো হয় ফিলিস্তিনিরা : ইন্টারনেট
গাজার খান ইউনুস একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের মধ্যে জুমার নামাজের জন্য জড়ো হয় ফিলিস্তিনিরা : ইন্টারনেট

টাইমস অব ইসরাইল ও রোয়া নিউজ

দীর্ঘ যুদ্ধবিরতির পর প্রথমবারের মতো গাজার মসজিদগুলোতে একসাথে ধ্বনিত হলো আজানের সুর এবং ক্ষতবিক্ষত, ধ্বংসস্তূপে ঘেরা শহরজুড়ে হাজারো ফিলিস্তিনি শুক্রবার জুমার নামাজে অংশ নিয়েছেন। মসজিদ ফিলিস্তিনিদের জন্য শুধু নামাজের স্থান নয় বরং তাদের আশ্রয়স্থলও। এক সপ্তাহ আগে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতির পর এটিই ছিল প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে একত্রে অনুষ্ঠিত জুমার নামাজ।

গাজা উপত্যকার ধ্বংসপ্রাপ্ত ও অর্ধভাঙা অসংখ্য মসজিদে শুক্রবার দুপুরে একসাথে তাকবির ধ্বনী আল্লাহু আকবার ভেসে আসে। গাজা নগরীর ঐতিহাসিক সাইয়্যেদ হাসেম মসজিদে নামাজ পড়ার পর স্থানীয় বাসিন্দা গালিদ আল-নিমরা আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, ‘দুই বছরের বিচ্ছিন্নতার পর একসাথে নামাজ পড়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’

গাজা সিটির পুরনো অটোমান আমলের দরজা পেরিয়ে মুসল্লিরা দলে দলে মসজিদে প্রবেশ করেন। কেউ দাঁড়িয়েছিলেন, কেউ সিজদা করছেন, সবার চেহারায় ছিল গাম্ভীর্য, চোখে ছিল অশ্রু। হামাসের তথ্য মতে, গাজার মোট ১ হাজার ২৪৪টি মসজিদের মধ্যে ১ হাজার ১৬০টিই আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।

উত্তর গাজার বাস্তুচ্যুত এক বাসিন্দা আবু মাহমুদ সালহা বলেন, তার এলাকার আল-ফালুজা মসজিদ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় তিনি এখন রাস্তায় নামাজ পড়েন এবং জুমার জামাতে ইমামের কণ্ঠ শুনতে তার মন ব্যাকুল হয়ে উঠে। অনেকে ভাঙা মসজিদে, আবার কেউ কেউ ধ্বংসস্তূপে বা খোলা আকাশের নিচে জায়নামাজ বিছিয়ে জুমার নামাজ আদায় করেন।

বাস্তুচ্যুত মোয়াতাজ আবু শরবি বলেন, ‘আমরা এখন বালির ওপর বা কার্ডবোর্ডে নামাজ পড়ি, এটা মানসিকভাবে ভীষণ কষ্টের। মসজিদ ছিল আমাদের জীবনের কেন্দ্রবিন্দু, আমাদের আত্মার আশ্রয়। ঘর হারানো যেমন বেদনার, তেমনি মসজিদ হারানো আরো গভীর আঘাতের।’

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরের আলবানী মসজিদের ভগ্নাবশেষেও শুক্রবার শত শত ফিলিস্তিনি নামাজ পড়েন। দেয়াল ভেঙে পড়া, ছাদ ধসে যাওয়া সেই মসজিদে এক ইমাম লাউডস্পিকারে খুতবা দেন, আর উপস্থিতরা চোখ মুছে দোয়ায় মগ্ন হন। ২২ বছর বয়সী সালিম আল-ফাররা বলেন, ‘আমরা আশা করি, গাজার সবকিছু এবং মসজিদগুলোও একদিন পুনর্নির্মিত হবে।’

এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে, হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরাইল দাবি করেছে, তাদের অভিযানে নিহতদের মধ্যে ২২ হাজারের বেশি ছিলেন যোদ্ধা, আর অক্টোবর ৭-এর হামলায় ইসরাইলের ভেতরে আরো ১ হাজার ৬০০ হামাস সদস্য নিহত হয়েছেন, যদিও সেই হিসাব নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে।