নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় দেখতে চাই। তারা যেন নিরপেক্ষভাবে আচরণ করে এবং তাদের সব কর্মকাণ্ডে জাতি যেন আশ্বস্ত থাকতে পারে, সেটাই আমরা প্রত্যাশা করি। কিন্তু সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে আজকে এসে আমরা হতাশা ব্যক্ত করছি।
গতকাল রাজধানীর গুলশান হোটেল লেকশোতে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, গত মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে। আমরা কিছু সত্য আবিষ্কার করতে পেরেছি। এতদিন আমরা মনে করতাম জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রেফারির ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু মঙ্গলবার যে সুপারিশ তারা সরকারের কাছে দিয়েছে সেটা একপক্ষে সরকারেরও একটা এন্ডোর্সমেন্ট হয়েছে- জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে তো বটেই। তিনি বলেন, রেফারিকে কখনো গোল দিতে দেখিনি। তবে ঐকমত্য কমিশনের সাথে আলোচনার সময় মনে হয়েছে, তারা সরকার এবং আরো দুই-তিনটি দল বোধ হয় একপক্ষ, আর আমি বিপক্ষেই খেলছিলাম। তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনে যেভাবে ঐকমত্যে পৌঁছানো হয়েছে এবং যে দলিলটা ১৭ অক্টোবর পার্লামেন্টের দক্ষিণ প্লাজায় ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে স্বাক্ষরিত হয়েছে- সেই দলিলটা সেখানে নেই। শুধু ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব ও রাজনৈতিক দলগুলোর যে সুপারিশ। কিন্তু ঐকমত্য হলো কিভাবে, কোথায় কোথায় ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে- তার কোন উল্লেখ নাই।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ৪৮টি দফা সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধনের প্রস্তাবসহ তারা আদেশে তফসিল হিসেবে সংযুক্ত করেছে এবং বলেছে, এগুলোর ওপরে ‘গণভোট’ হবে। তাহলে প্রশ্ন আসে, তাই যদি হতো, তবে ১১ বা ১২ মাস ধরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে এই কসরত কেন করা হলো? তিনি বলেন, যার ওপরে গণভোট হবে, সেই জুলাই জাতীয় সনদ যেটা স্বাক্ষরিত হয়েছে- সেটা তো এখন দলিলে নেই, গতকালকের সুপারিশের মধ্যেও নেই। বরং যেসব প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশন এবং দুই-একটি দল দিয়েছিল, সেই প্রস্তাবগুলো তারা সরাসরি ওই খসড়া আদেশের মধ্যে তফসিল হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বলা হয়েছে, ৪৮টি দফার ওপরে গণভোট হতে হবে। অথচ সেই বিষয়ে আমাদের সাথে কোনো আলাপ হয়নি। ঐকমত্য কমিশনে অমত হয়েছে, নির্দিষ্ট কিছু পয়েন্টে কিছু দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। বলা হয়েছে, এই নোট অব ডিসেন্টগুলো তারা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করবে।
সালাহউদ্দিন বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্দেশ্য ছিল ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তাদের প্রস্তাবগুলো জাতিকে ঐক্যের পরিবর্তে বিভক্ত করবে, অনৈক্য সৃষ্টি করবে। এর ভিত্তিতে তারা কি অর্জন করতে চায়, আমরা জানি না। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে যে অধ্যাদেশ আরপিওতে এসেছে, সেখানেও আমরা লক্ষ্য করেছি উদ্দেশ্যমূলকভাবে, নির্বাচন সংস্কারসংক্রান্ত কমিশনের একটি অনালোচিত প্রভিশন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যেমন- জোটভুক্ত যেকোনো রাজনৈতিক দলের স্বাধীনতা ছিল নিজস্ব প্রতীক বা জোটের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ায়। হঠাৎ করে তারা এক অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বলে দিলো, জোটভুক্ত হলেও নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। আমরা দেখেছি, আরেকটি রাজনৈতিক দল এটিকে সমর্থন করছে। এটা সরকারের পক্ষপাতমূলক আচরণ, যা আমরা আশা করি না।



