কৃষক থেকে মৎস্যজীবীতে রূপান্তর বিল ডাকাতিয়ার মানুষ

Printed Edition
কৃষক থেকে মৎস্যজীবীতে রূপান্তর বিল ডাকাতিয়ার মানুষ
কৃষক থেকে মৎস্যজীবীতে রূপান্তর বিল ডাকাতিয়ার মানুষ

আনোয়ার হোসেন আকুঞ্জী ডুমুরিয়া (খুলনা)

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বিল ডাকাতিয়া- একসময় ছিল সোনার ফসলের মাঠ। ধান, পাট, শাকসবজি, ডালসহ নানা ফসলের সমারোহে মুখর থাকত এ জনপদ। কিন্তু এখন সেই স্মৃতি অতীত। বছরের পর বছর পানিবদ্ধতা এমনভাবে বেড়েছে যে, সেই সব কৃষিমাঠে এখন আর ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছে না। জমির বুকজুড়ে স্থায়ীভাবে জমে থাকা পানিতে জন্ম নিয়েছে মাছ, বেড়েছে মাছের প্রজননক্ষেত্র। ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়েই লাঙল ফেলে হাতে নিয়েছেন মাছ ধরার জাল। হয়ে ওঠছেন তারা মৎস্যজীবী।

পরমানন্দ মল্লিক (৫৫) ছিলেন কৃষ্ণনগর গ্রামের এক কৃষক। এখন তিনি রূপান্তরিত হয়েছেন পুরোপুরি মৎস্যজীবী রূপে। একসময় নিজের দুই একর জমিতে ধান চাষ করে সংসার চলত তার। এখন সেই জমি বছরের বেশির ভাগ সময়ই পানিবদ্ধতায় ডুবে থাকে। তিনি বলেন, জমি আছে কিন্তু কিছু ফলাতে পারি না। তাই, এখন বিলে মাছ ধরি। যা পাই তাই দিয়েই চলে সংসার। পরমানন্দের মতো শিবপদ বালা, ধ্রুব মণ্ডল, অজিত বালা- সবাই এখন মাছ ধরার সাথে যুক্ত। কারো হাতে জাল, কেউ ঘুনি বানান, কেউ মাছ বিক্রি করেন। একসময় যারা কৃষক ছিলেন, তারা এখন জীবিকার তাগিদে মৎস্যজীবী। আগে মাছ ধরা কাজটি সামাজিকভাবে ছোট করে দেখা হতো। কিন্তু এখন সবাই নেমে এসেছেন এক কাতারে। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা তারক চন্দ্র মণ্ডল বলেন, অতিবৃষ্টিতে জমিতে কিছুই হয় না। এখন সবাই মাছ ধরেই জীবিকা চালায়। কৃষক, শ্রমিক, এমনকি তিনি নিজেও এখন বাজারে মাছ বিক্রি করেন।

এই পরিবর্তনের সাথে যুক্ত হয়েছে নারীরাও। কৃষ্ণনগরের অনামিকা মল্লিক প্রতিদিন স্থানীয় আড়তে মাছ বাছাইয়ের কাজ করেন। তিনি বলেন, কাজ না করলে আমার সংসার চলে না। আগে মেয়েরা এসব কাজ করত না, এখন সবাই করছে।

এভাবে বিল ডাকাতিয়ায় গড়ে উঠেছে নতুন অর্থনীতি। স্থানীয় ব্যবসায়ী দশরত বালা প্রতিদিন আড়ত থেকে চার-পাঁচ হাজার টাকার মাছ কিনে গ্রামে নিয়ে বিক্রি করেন। তার ভাষায়, কখনো লাভ হয়, কখনো লোকসান- তবু জীবন চালাদে হলে থেমে তো থাকা যায় না। নদী ভরাট, নিষ্কাশনব্যবস্থার দুর্বলতা ও অতিবৃষ্টিতে বিল ডাকাতিয়ার জলাবদ্ধতা এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। ফসলি জমি পরিণত হয়েছে জলাশয়ে।

বিল ডাকাতিয়ার এই রূপান্তর আসলে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চলের বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে মানুষ খুঁজছে টিকে থাকার নতুন পথ। পরমানন্দদের মতো এ অঞ্চলের মানুষ জানে- আগামী মৌসুমেও হয়তো ধান ফলবে না। কিন্তু বিলে জাল ফেললে হয়তো বেঁচে থাকার উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে।