বাসস
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন, কোনো বিভেদ-বিভাজন আপনাকে আমাকে শক্তিশালী করবে না। সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিলো বলেই স্বৈরাচার পালিয়েছে। বিভক্তিতে স্বৈরাচার ফেরার পথ সুগম হবে।
গতকাল রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানানো এক ফাঁকে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
এতে নেতৃত্ব দেন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিইএব) আহ্বায়ক মো: হানিফ ও সদস্য সচিব কাজী শাখাওয়াত হোসেন। এ সময় বিএনপির অন্যান্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ডা: জাহিদ বলেন, ‘কেউ যদি স্বৈরাচারকে পুনর্বাসিত করতে চান তাহলে এ ধরনের প্রহসনমূলক ব্যবস্থার আয়োজন করবেন যেটি সত্যিকার অর্থে শেষ বিচারে ভালো বলে পরিগণিত হবে না। এখনো সময় আছে, সবার প্রতি আহ্বান আপনারা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হন। গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই করেছেন তারা কোনো অবস্থাতেই বিভাজনের রাজনীতিতে যাবেন না। ঐক্যের রাজনীতিতে আসুন। জনগণের মনের ভাষা বুঝতে চেষ্টা করুন। জনগণের ওপর দায়িত্ব দিন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে উল্লেখ করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ছাত্র সংসদের যে নির্বাচন হচ্ছে আপনারা দেখতে পাচ্ছেন এটি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। গতকালকে যে জাকসু নির্বাচন হয়েছে সেখানে শুধু ছাত্রদলের কথা কেন বলেন সেখানে বিভিন্ন প্যানেল, স্বতন্ত্র প্রার্থী, ইভেন শিক্ষকরা পর্যন্ত নির্বাচন থেকে অনেকেই সরে দাঁড়িয়েছেন। নিশ্চয়ই সেখানে কোনো না কোনো কারণ আছে।
ডা: জাহিদ বলেন, ‘দেশের মানুষ ২০০৯ এ ভোট দিতে পারে। ২০১৪ তে ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছে, ২০১৮ তে দিনের ভোট রাতে হয়েছে, ২০২৪ এ ডামি নির্বাচন হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি আস্থা রাখতে চায়। যারা এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট তাদের উচিত হবে এমন কোনো নির্বাচন আয়োজন না করা যে নির্বাচন নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন আসবে, মানুষ দ্বিধাগ্রস্ত হবে, নির্বাচন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো সরে যাবে।’
ডাকসু নির্বাচনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম এবং জাকসুতে নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন ডা: জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, ‘যারা এসব প্রক্রিয়ার (নির্বাচন প্রক্রিয়া) সাথে সম্পৃক্ত তাদেরকে বলব, বামেও যাবেন না ডানেও যাবেন না, মধ্যবর্তী অবস্থা অবলম্বন করুন এবং ভোটারদের সাথে জনগণের সাথে পরিবেশের সাথে খাপখাইয়ে চলুন। কোন দিকে হেলে পড়ার দরকার নেই। আপনি আপনার নিরপেক্ষতা দিয়েই প্রমাণ করবেন এবং আগামী দিনের ভবিষ্যৎ স্বীকৃতি দিবে আপনার অবস্থান কী ছিল।
তিনি বলেন, ‘আজকে পলায়নকৃত স্বৈরাচার ও দেশবিরোধী শক্তির ঐক্য সেটি যদি আমাদের রুখতে হয় তাহলে মনে রাখতে হবে দেশের সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, তাদেরকে সাথে নিয়ে এবং গণতন্ত্রকামী মানুষকে সাথে নিয়ে আজকে আমাদের এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। মনে রাখতে হবে জনগণের শক্তির সামনে, জনগণের ইচ্ছার সামনে, জনগণের আকাক্সক্ষার সামনে গণতন্ত্রের প্রতি জনগণের যে অদম্য স্পৃহা এটিকে থামিয়ে দেয়ার শক্তি কোনো ষড়যন্ত্রকারীর নেই।’
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা আরো বলেন, ‘সারা পৃথিবীতে দেখা গেছে, যখনই কোনো দুর্যোগ দুর্বিপাক আসছে, যখনই কোনো স্বৈরাচারের উদ্ভব হয়েছে জনগণই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং বিগত ৩৬ জুলাই জনগণই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছিল সেই আন্দোলন, যা এক দফার আন্দোলনে রূপ লাভ করেছে জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই।’
আজকেও যারা দেশের গণতন্ত্রকে পিছিয়ে দেয়ার, গণতন্ত্রকে প্রলম্বিত করার অপচেষ্টা করছে দেশে এবং বিদেশে বসে তাদের হীন চেষ্টা জনগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ওপর এবং সচেতনতার ওপর কোনো দিনই স্থান পাবে না বলে উল্লেখ করেন ডা: জাহিদ।
তিনি বলেন, শেষ বিচারে জনগণের জয় হবে, জয় হবে গণতন্ত্রের, জয় হবে মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের। জনগণই সিদ্ধান্ত নিবে আগামী দিনের সংবিধান কী হবে, আগামী দিনের সংস্কার কী ধরনের হওয়া উচিত, জনগণ যাদেরকেই নির্বাচিত করে সংসদে পাঠাবে তারাই ৩৬ জুলাইয়ের যে আদর্শ এবং উদ্দেশ্য সর্বোপরি এ দেশের মানুষের আকাক্সক্ষার ওপরে ভিত্তি করেই আগামী দিনে সংসদে সংস্কার হবে।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতারা কবরের সামনে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে শপথবাক্য পাঠ করেন। গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রকৌশলী মো: হানিফের নেতৃত্বে ৩৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়।



