হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রামগতিতে ৪৯ অবৈধ ইটভাটা

Printed Edition
রামগতির একটি অবৈধ ইটভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে : নয়া দিগন্ত
রামগতির একটি অবৈধ ইটভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে : নয়া দিগন্ত

রেজাউল হক রামগতি (লক্ষ্মীপুর)

হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় উপজেলা রামগতিতে দাপটের সাথে চলছে ৪৯টি অবৈধ ইটভাটা। পরিবেশ অধিদফতরের কোনো অনুমোদন না নিয়েই এসব ভাটা তৈরি করছে ইট। এর ফলে কৃষিজমি, পরিবেশ ও স্থানীয় অবকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত মৌসুমে রামগতিতে মোট ৪৯টি ইটভাটা চালু ছিল, এর মধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদন ছিল মাত্র দু’টি- বনলতা ও সরকার ব্রিকস। নতুন মৌসুমে আরো দু’টি ভাটা নির্মাণাধীন থাকায় সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১টিতে, যার মধ্যে ৪৯টিই অবৈধ। চর আফজল গ্রামে ২৭টি, চর আলগীতে আটটি, চর মেহারে ১৩টি, চর কলাকোপায় একটি ও চর পোড়াগাছায় দু’টি ইটভাটা রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, অবৈধ ভাটাগুলো বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী অনতিবিলম্বে এসব ভাটা বন্ধ করা হবে। তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই অধিকাংশ ভাটা চালু থাকে; পরিবেশ ছাড়পত্র নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন না কেউ।

সরেজমিন দেখা গেছে, নতুন মৌসুমের জন্য ভাটাগুলো ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোথাও কাঁচা ইট তৈরির শেষ পর্যায়, কোথাও আবার আগুন জ্বালানোর প্রস্তুতি চলছে। শত শত শ্রমিক দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন এসব অবৈধ ইটভাটায়। অনেক শিশুকেও ভাটায় কাজ করতে দেখা গেছে।

ইটভাটাগুলোর আশপাশের ফসলি জমির মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে নির্বিচারে। এতে কৃষিজমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, রবি ফসল ও গাছপালা বিনষ্ট হচ্ছে। কাঠ পোড়ানোর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বনাঞ্চল, আর ভারী যানবাহনে ভেঙে পড়ছে গ্রামীণ সড়ক।

চর আফজল গ্রামের বাসিন্দা ফারহাজ আহম্মেদ বলেন, এক বছরও টেকে না রাস্তাগুলো। চর আলগী গ্রামের কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন, সব ভাটাই গড়ে উঠেছে ফসলি মাঠে। ফসল ফলানোর মতো জমি আর থাকছে না। কৃষি অফিসেরও কোনো তৎপরতা নেই। চর আফজলের কৃষক রফিক উদ্দিন বলেন, প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জরিমানা করলেও কোনো ভাটা বন্ধ হয় না। ভারী ট্রলিতে মাটি পরিবহনে জমি ও রাস্তাঘাট দুই-ই নষ্ট হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসন অবৈধ ভাটা বন্ধের চেয়ে সভা-সেমিনার ও মাইকিংয়েই বেশি মনোযোগী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাটা মালিক বলেন, সবাইকে খুশি করেই চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী বছর পরিবেশবান্ধব ভাটা করব।

রামগতি উপজেলা ব্রিকস ফিল্ড মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছানাউল্যা জানান, সংগঠনের ৪৯ সদস্যের অনেকেই বৈধ কাগজের জন্য আবেদন করে রেখেছেন। তবে সভাপতি খলিল উল্যাহ স্বীকার করেন, চিমনি স্থাপন, কৃষিজমি রক্ষা বা কাঠ পোড়ানো বন্ধে আমরা কার্যকর কিছু করতে পারিনি।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ বাস্তবায়নে গত আগস্টে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং ও প্রচারণা চালানো হয়েছে। অনুমোদনহীন ভাটাগুলো বন্ধে সভা করা হয়েছে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর একই আশ্বাস শুনে আসছেন তারা। এই আশ্বাসের মধ্যেই তারা হারাচ্ছেন তাদের ফসলি জমি, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, আর প্রশাসনের পদক্ষেপ সীমাবদ্ধ রয়েছে শুধু কাগজে-কলমে।